পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৯৩
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
১৯৩

পীঠস্থান ও স্থান মাহাত্ম রহস্য জানালেন, মাসখানেকও হয়নি; গত ৮ জ্যৈষ্ঠ দুপুর বেলার ঘটনা। ডিমের ঝুড়ি নিয়ে খেজুরতলা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠা-ঠা রােদুর। হঠাৎ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হল। ডিমের ঝুড়ি নামিয়ে পেটে চেপে কাতরাতে থাকেন। ঠিক সেইসময় ওখানে আবির্ভূতা হলেন অসাধারণ সুন্দরী এক বৃদ্ধা। পরলে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। গােটা শরীর থেকে সূর্যরশ্মির মত তেজ বেরচ্ছে। বুড়ি মা বললেন, ভক্তি আর বিশ্বাস নিয়ে এই খেজুরতলার মাটি খা, তাের ব্যথা সেরে যাবে। খেতে সত্যিই মুহূর্তে ব্যথা সেরে গেল। বুড়ি মা-কে গড় হয়ে প্রণাম করলেন ব্রজেন ব্রহ্ম। মা বললেন, “বাবা ব্রজেন, তুই এই কথা প্রচার কর, যে ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে খেজুরতলার মাটি খাবে, বুড়ি মা'র কৃপায় সে যে কোনও রােগ থেকে মুক্ত হবে।” | ব্রজেন ব্রহ্ম তারপর পারপাটনা গ্রামের কয়েকজনকে ঘটনার কথা বলেন। গ্রামের কার্তিক পাড়ুই, মাধব হাজরা আরও কিছু যুবকের নেতৃত্বে খেজুর গাছের আশে-পাশের জঙ্গল কেটে বুড়ি মা’র থান তৈরি করে। মায়ের কৃপায় দেখতে দেখতে এখন প্রত্যেকদিন হাজার তিরিশেকের মতাে লােক হচ্ছে। শনি-মঙ্গলবার ৪০-৫০ হাজার। ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে এই খেজর তলার মাটি খেয়ে এডস রােগী, ক্যানসার রােগীও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। যে কোনও সমস্যা নিয়ে-ই আসুন, অলৌকিক মাটির গুণে সব সমস্যার-ই সমাধান হবে। আশিস মণ্ডলকে এগিয়ে দিয়ে জানালাম, বেচারা তােতলা। ওকে মাটি খাইয়ে সারিয়ে তুলতে পারলে আমরা হাতে গরম প্রমাণ পেয়ে যাই। ব্রজেনবাবু আশিসকে মাটি খাওয়ালেন। সেসব ছবিও ডিজিটাল ক্যামেরায় তুললেন দেবজ্যোতি। জিজ্ঞেস করলাম, মানিক পিরের মাজারকে আপনারা বুড়িমা’র থান বানিয়ে স্রেফ ব্যবসা করছেন বলে অভিযােগ করেছেন স্থানীয় মুসলিম ধর্মের মানুষরা। এখানে বনবিবির পুজো করতেন স্থানীয় মানুষরা। বনবিবিকে আপনারা বুড়ি মা বানিয়ে টাকা কামাচ্ছেন, লােক ঠকাচ্ছেন বলে ওঁদের অভিযােগ। আপনি কী বলেন? ব্রজেন ব্রহ্ম এমন বেয়াড়া প্রশ্নের জন্য বােধহয় তৈরি ছিলেন না। তারপর হঠাৎ করে ক্ষোভ উগরে দিলেন মন্দির কমিটির উপর। বললেন, যা প্রণামী পড়ে, ছবি, সাঁকো, নৌকো থেকে যা রােজগার, সবই নিয়ে নেয় মন্দির কমিটি। ব্রজেন ব্রহ্ম মাসে মাত্র দেড় হাজার টাকা পান। নৌকোর মাঝি থেকে স্বেচ্ছাসেবকরাও মাসে সামান্য টাকা মাইনে পান। এসবই দেয় মন্দির কমিটি। খেজুরতলা মন্দির কমিটিতে যারা আছেন তারা-ই মােটা টাকা কামাচ্ছেন। আর তাইতে-ই রাগ গ্রামের মুসলিম মুরুব্বিদের। তাদের আসল উদ্দেশ্য, চাপ দিয়ে মন্দির কমিটিতে ঢুকে অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড)- ১৩