পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পীঠস্থান ও স্থান মাহাত্ম রহস্য
২০১
এই পাখি দুটির ব্যবহার অন্য পাখিদের তুলনায় কিছুটা অস্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু তার বেশি কিছু নয়।

 অনেকের মনে হতে পারে, খাবার খেতে শুধু দুটি মাত্র পাখি আসে কেন? কেন অন্য পাখিরাও আসে না?

 আমার স্ত্রী সীমাকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখেছি চারদিকে খাবার ছিটিয়ে অনেক পাখিকে আকর্ষণ করার চেষ্টা না করে, একটা বা দুটো পাখিকে আলাদা করে খাওয়াবার চেষ্টা করলে শুধু তারাই খাবার দেবার নির্দিষ্ট সময়ে এসে হাজির হয়। আমি একবার প্রায় এক বছর ধরে সামনের বারান্দায় বসে সকালের চা খেতাম এবং আমার বিস্কুট থেকে একটা টুকরো একটা কাককে দিতাম। প্রতিদিনই কাকটা বিস্কুটের টুকরোর লোভে আমার সকালের চা খাওয়ার সময়ে এসে হাজির হতো।

 তাহলে এটুকু নিশ্চয়ই বোঝা গেল যে, পক্ষিতীর্থের পাখিদের নির্দিষ্ট সময়ে খেতে আসার মধ্যে কোন অলৌকিক নেই। এবার দেখা যাক, পাখি দুটো সত্যিই প্রতিদিন ১৩০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে কাশী থেকে উড়ে আসে এবং তাদের নিবেদিত ভোগ গ্রহণ করে আবার কাশীতেই ফিরে যায় কি না?

 সত্যিই যদি কাশী থেকেও পাখিরা আসছে বলে ধরে নিই, তবুও তাকে অলৌকিক কিছু বলা যায় না, ১৩০০ কিলোমিটার কেন, কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে যাযাবর পাখিরা জায়গা চিনে এক মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশের নির্দিষ্ট কোন চিড়িয়াখানায় বা জলাশয়ে বিশেষ একটা নির্দিষ্ট সময়ে এসে হাজির হয়।

 কিন্তু পক্ষিবিশেষজ্ঞদের মনেও বিস্ময় জাগে, যখন শোনা যায় পক্ষিদেবতা প্রতিদিনই ১৩০০ কিলোমিটার পথ উড়ে আসে এবং ১৩০০ কিলোমিটার উড়ে ফিরে যায়।

 সত্যিই যে ওরা বারাণসী (কাশী) থেকে আসে তার কোন প্রমাণ নেই। অবশ্য কিছু পক্ষিবিশেষজ্ঞের মতে পাখি দুটি উৎসর্গীকৃত ভোগ গ্রহণের পর একটু দুরের একটা ছোট পাহাড়ে তাদের বাসায় চলে যায়। আবার সেখান থেকে পরের দিন ফিরে আসে।

 বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি এই বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবার চেষ্টা করেন, কিন্তু মন্দিরের পুরোহিতরা ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী কিছু ব্যক্তি সোসাইটির গবেষকদের অনুসন্ধান চালাতে দেননি। ফলে, পক্ষিবিশেষজ্ঞদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা ধরে নিতে পারি, বিশেষ শিক্ষাপ্রাপ্ত পাখিরা সুদীর্ঘকাল ধরে এমনি করেই কিছুটা দূরের বাসা থেকে উড়ে এসে ভোগ খেয়ে যাচ্ছে। পাখিদের অমর বলে চালানোর জন্য প্রয়োজনমতো বৃদ্ধ বা আহত পাখি বদল করা হচ্ছে।

 এখন দেখা যাক, পাখি দুটি কোন জাতীয় পাখি? পুরোহিতদের কথামতো পাখি দুটি এতই প্রাচীন আমলের যে, এই জাতীয় পাখি বর্তমান বিশ্বে আর নেই।