পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পীঠস্থান ও স্থান মাহাত্ম্য রহস্য
২০৭

 পরিচ্ছন্ন দরগা। মাঝখানে মাজার-ঘর, দরবেশের সমাধি। মাজারের সামনে মাটিতে রয়েছে দুটো পাথর, যার ওজন সম্বন্ধে প্রতিবেদক লিখেছিলেন ৬০ কেজি ও ৯০ কেজি। সঠিক ওজন জানার মতাে কোনও ব্যবস্থা ওখানে ছিল না। দরগার ফকিরদের বলা ওজনের হিসেব সঠিক না-ও হতে পারে।

 মাজারে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নেই, সুতরাং স্ত্রীকে বাইরে রেখেই আমি আর ছেলে পিংকি মাজারে গিয়েছিলাম। ওখানে আমরা বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম। তারই মধ্যে কয়েকবার কিছু ভক্ত আঙুল ছুঁইয়ে ছােট আর বড় দুটো পাথরই তুললেন। ছােট পাথর তুলতে ৯ জন এবং বড় পাথর তুলতে ১১ জনের প্রয়ােজন হচ্ছিল। আমি দরগার ফকিরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “শুনেছি, ছােট আর বড় পাথরটা তুলতে ৭ জন ও ৯ জনের প্রয়ােজন হয়।”

 ফকির বললেন, “না, ভুল শুনেছেন, ৯ জন আর ১১ জনের আঙুল ছোঁয়াতে হয় পাথরের তলায়। সবাই একসঙ্গে ‘কামার আলিশা দরবেশ’ বলে যত জোরে সম্ভব একবার উচ্চারণ করুন, দেখবেন দরবেশের কৃপায় পাথর শূন্যে উঠে যাচ্ছে।”

 দেখলামও বেশ কয়েকবার। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, প্রতিবার পাথরে আঙুল, ছোঁয়ার সময় ভক্ত দর্শকদের চেয়ে দরগার ফকিরের সংখ্যা থাকছে বেশি।

 আমি কিছুক্ষণের অপেক্ষায় আমাকে নিয়ে ৮ জন দর্শক যােগাড় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ৯ জন পূর্ণ করতে আমাদের একজন ফকিরের সাহায্য নিতে হয়েছিল। আমরা ফকিরেরই সঙ্গে সুর মিলিয়ে একসঙ্গে চিৎকার করলাম ‘কামার আলিশা দরবেশ’। কথাটা উচ্চারণ করতে আমাদের সময় লেগেছিল ১ সেকেণ্ডের মতাে। আমরা প্রতিটি দর্শক আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম পাথর উঠল না। অমনি আমাদের কাছে ছুটে এলাে আর কয়েকজন ফকির। তারা বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, আমাদের মধ্যে নিশ্চয়ই কয়েকজন খারাপ লােক আছে, তাই পাথর ওঠেনি। বুঝেছিলাম, ক্ষিপ্ততা আসলে অভিনয়। পাথর না ওঠার কারণ যাতে দর্শকদের যাতে গ্রহণযােগ্য মনে হয়, তাই তাদের এই ছেঁদো যুক্তি সহযােগে অভিনয়। আসলে পাথর দরবেশের নামের জোরে ওঠে না। ওঠে দরগার ফকিরদের অভিজ্ঞ হাতের আঙুলের ছোঁয়ায়। ফকিরদের হাতের হ্যাঁচকায় পাথর ওঠে পাথর উঠতে থাকার স্থায়িত্বকাল দরবেশের নাম উচ্চারিত হওয়া পর্যন্ত এবং সেটা দেড় সেকেণ্ডের মতাে, Impulsive force প্রয়ােগ করার সময় পর্যন্ত। অন্ধ ভক্তেরা ধরে নেন পাথর উঠল তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় ও দরবেশের নামের জোরে।

 প্রতিবেদক লিখেছেন, “আঙুলে বিন্দুমাত্র ওজন অনুভব হয় না।” আমি পরীক্ষা করে ও যাঁরা তুলেছেন তাঁদের জিজ্ঞেস করে দেখেছি, স্বল্প হলেও প্রত্যেকেই ওজন অনুভব করেছেন। বুঝেছি মস্তিষ্কের কোষগুলাে স্বাভাবিক থাকলে প্রত্যেকেই ওজন অনুভব করবেন।