পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
Psycho-kanesis বা Pk (মানসিক শক্তি)
২৬৫

মেলা বসে গেল। বেলাও বাড়ে, লােকও বাড়ে।

 সাধুজি ঘাটের কাছে ধুনি জ্বেলে গভীর ধ্যানে মগ্ন। বেলা বারােটা যখন বাজে-বাজে, তখন জনতা চিৎকার করে উঠল, “স্টিমার আসছে, স্টিমার আসছে।”

 সাধুজির ধ্যান ভাঙল এবার। চোখ মেলে তাকালেন। গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে চললেন গঙ্গার দিকে। কোমর জলে নেমে থামলেন সাধুজি। তারপর বাজখাঁই গলায় চেঁচালেন, “আয় বেটা জাহাজ, আজ তােকে গিলে খাব।”

 সাধুজি যত চেঁচান, দর্শকদের সঙ্গে সঙ্গে শরৎচন্দ্রের বুক ঢিপ্‌ঢিপ্‌ করে। কী বিরাট অঘটন ঘটে যাচ্ছে ভাবতে গিয়ে আর থই পান না।

 প্রচণ্ড গর্জন তুলে স্টিমার এসে পড়ল। স্টিমারের ঢেউ আছড়ে পড়ল ঘাটে। সাধুজি হাঁ করে আবার যেই স্টীমারের দিকে এগােচ্ছেন, অমনি জনাকয়েক শিষ্য জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধুজিকে ঘিরে কেঁদে পড়ল, “গুরুজি, জাহাজের কয়েক’শ নিরীহ যাত্রীদের আপনি বাঁচান। ওরা তাে কোনও অপরাধ করেনি। জাহাজের দোষে ওদের কেন প্রাণ নেবেন?”

 শিষ্যদের কান্নাভেজা অনুরােধে গুরুজির মন নরম হলাে। ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, “তােদের জন্যেই জাহাজটা বেঁচে গেল।”

 এ-ক্ষেত্রেও কিন্তু সাধুজির অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা প্রমাণিত হলােনা তাঁর শিষ্যদের জন্যে। অথবা এ-ও বলা যায়, গুরুজির বুজরুকি ধরা পড়ল না তাঁরই শিষ্যদের অভিনয়ে।

লিফ্‌ট ও কেব্‌ল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার

অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার নানা চমক দেখিয়ে ইউরি গেলার ইউরােপের দেশগুলােতে যথেষ্ট হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছিলেন। অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা দেখাতে জার্মান থেকেই প্রস্তাব এল। যিনি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন তিনি ব্যবসা ভালােই বােঝেন। পাবলিসিটির জন্য বিস্তর খরচ করলেন। ইউরি মিউনিখে পা দিতেই সেখানকার পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের সাংবাদিকেরা ছেঁকে ধরলেন তাঁকে। কয়েক দিন ধরে ইউরি, কয়েক জায়গায় চামচ ভাঙা, চামচ বাঁকানাের ঘটনা ঘটালেন, দেখালেন থট রিডিং-এর খেলা। কয়েকদিন পরে ম্যানেজার গেলারকে নতুন ধরনের শক্তি প্রয়ােগের জন্য হাজির করলেন। পাহাড়ের গা থেকে রােপওয়ে ধরে এগিয়ে আসা কেবল-কার দাঁড় করিয়ে দিলেন গেলার। তারপর একটা ডিপার্টমেণ্টাল সেণ্টারের লিফ্‌টকে থামিয়ে দিলেন। প্রচারের বন্যায় ভেসে চললেন গেলার। তারই মাঝে কয়েকজন গেলারের এই ক্ষমতায় সন্দেহ প্রকাশ করলেন। কয়েকজন তাঁদের মােটরকার ও মােটরবাইক আটকাবার জন্য চ্যালেঞ্জ জানালেন। ‘অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী’ ইউরি বােকা নন। আল-টপকা চ্যালেঞ্জকে গ্রাহ্যই করলেন না। তাতে ইউরির ক্ষতি যত হয়েছে, লাভ হয়েছে তার চেয়ে বেশি। কারণ, চ্যালেঞ্জ জেতা ইউরির পক্ষে সম্ভব ছিল না।