পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৮
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

 “তাই না কি? বাঃ বাঃ, আপনার তাে সব মর্ডান অটোমেটিক ব্যবস্থা দেখছি।” আমার কথাগুলােকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার মধ্য দিয়ে রূপরাজ টেনশন মুক্ত হতে চাইলেন।

 হাত বাড়ালাম। একটা সুইচ টিপতে যে কণ্ঠস্বর ঘরে ভেসে বেড়াতে লাগল সেটা রূপরাজের। সামান্য শব্দের কি শক্তি তা টের পেলাম। রূপরাজের চেহারা পালটে গেল। সােফায় ধপাস করে বসে পড়ে পায়ের তলার কার্পেট পা ঘষতে ঘষতে পাগলের মতাে মুঠো করে করে নিজের চুল টানতে লাগলেন। সেই সঙ্গে গােঙানাে কান্না, “আমি ক্ষমা চাইছি। সত্যিই ভুল হয়ে গেছে।” তারপর হঠাৎ উঠে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে আমার পায়ের পাতা দুটি সবল দুটি হাতে ধরে নিজের মাথাটা বার-বার ঠুকতে লাগলেন। “আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আপনাকে বুঝতে পারিনি। বুঝলে কখনও আসতাম না। আপনি দয়া করে আমার সম্বন্ধে কোনও পত্রিকায় কিছু লিখবেন না। লিখলে বরবাদ হয়ে যাবে। আমার এতদিনের সম্মান শেষ হয়ে যাবে। মুখ দেখাতে পারব না। কথা দিচ্ছি, আর কোনওদিন কোথাও বিনা অক্সিজেনে থাকার ঘটনা ঘটিয়ে দেখাব না।”

 বললাম, “এই মুখের কথাগুলােই আপনাকে লিখে নিতে হবে। আপনাকে ক্ষমা করার কোনও প্রশ্নই আসে না। এর আগে বহুজনকে ঠকিয়েছেন, আমাকে ঠকাতেই এসেছিলেন। আপনার কৌশল আমি ধরতে না পারলে, আপনার কাছে আমি হেরে গেলে আপনি কি আমাকে কোনও দয়া দেখাতেন? কোনও প্রতারকই তা দেখায় না। আপনি আমাকে শুধু আর্থিক ও মানসিকভাবেই বিপর্যস্ত করতেন না, আমাদের দেশে সদ্য গড়ে উঠতে শুরু করা কুসংস্কার বিরােধী আন্দোলনকেও এক ধাক্কায় অনেকটা পিছিয়ে দিতেন।”

 অনেক টালবাহানার পর রূপরাজ লিখে দিলেন একটি অঙ্গীকার পত্র। তাতে এও লিখলেন, “প্রবীরবাবুর কাছে আমি এক মিনিটের বেশি বিনা অক্সিজেনে থাকতে পারিনি। টাকার পরিবর্তে প্রবীরবাবুর পায়ে হাত দিয়ে মার্জনা চেয়েছি। প্রবীরবাবুকে কথা দিচ্ছি, আর কোনদিন এই ধরনের প্রতারণা করব না।”

 সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করলেন বহরমপুর কলেজের অধ্যাপক ও মুর্শিদাবাদ বিজ্ঞান পরিষদের সম্পাদক ডঃ মিহিরকুমার দত্ত ও সিঁথি অঞ্চলের জনৈক বিজ্ঞান কর্মী বিশ্বজিৎ ঘােষ।

 রূপরাজকে বললাম, “চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এসে হেরে গেলেন। তবু আপনার পাঁচ হাজার টাকা বেঁচে গেল। পরিবর্তে বিদায় নেবার আগে আমাদের একটু আনন্দ দিয়ে যান। তিনবার কান ধরে ওঠ-বস করুন।”

 বিখ্যাত ব্যক্তির কান ধরে ওঠ-বস করার মত একটা রােমাঞ্চকর ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার লােভ সামলাতে না পেরে সীমা (স্ত্রী) ও পিনাকী গুটি গুটি পায়ে বসবার ঘরে হাজির হলাে।