পাতা:আজাদ হিন্দ ফৌজ - দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদ হিন্দ ফৌজ
২৪৯

পারিত। তাহাদিগকে আধখানা করিয়া রুটি এবং সামান্য মণ্ড খাইতে দেওয়া হত।

 ১০ই নভেম্বর জাহাজ হংকংএ পৌঁছিলে বন্দীগণের জন্য নিযুক্ত গ্রহরীগণ তাহাদের মূল্যবান জিনিষপত্র লুঠ করে। বন্দীদের ষ্ট্যানলী কারাগারে লইয়া গিয়া পৃথক পৃথক ভাবে ছোট ছোট কুঠুরীতে আটকাইয়া রাখা হয়। কোন কোন বন্দীকে নির্ম্মমভাবে প্রহারও করা হয়। কয়েকদিন যাবৎ এই ব্যাপার চলে। কারাগারে বন্দীগণ প্রায় সকলেই পীড়িত হইয়া পড়ে। একটি ছেলে দারুন আমাশয় ভুগিতে থাকে। তাহাকে কোন ঔষধ খাইতে না দিয়া ক্যাস্টর অয়েল খাইতে দেওয়া হয়। কারা প্রাচীরের অন্তরালে বহুদিন কষ্টভোগের পর বন্দীগণকে মাদ্রাজে প্রেরণ করা হয়।

 বন্দুকের গুলী ও লাঠি চালনার আদর্শ, সংযম ও ধৈর্য্যের কাহিনী পুরাতন হইয়া গিয়াছে। সৈন্য এবং পুলিশ আমাদের দেশের নিরস্ত্র ব্যক্তিদের উপর যখনই গুলী ছোড়ে অথবা লাঠি চার্জ্জ করে, তাহা তাহারা একেবারে নিরুপায় হইয়াই করে, কিন্তু তাহাও তাহাও অত্যন্ত সতর্কতার সহিত এবং মৃদুভাবে—যতটুকু না করিলে চলে না, ঠিক ততটুকু। অত্যন্ত উত্তেজনার মধ্যে সৈন্য ও পুলিশ কিরূপ মাটির মানুষের মত শান্ত ও শীতল থাকে, তাহাই বৃটিশ শাসকগণ আমাদিগকে শুনাইয়া থাকেন এবং তাঁহারা নিন্দাভাজন না হইয়া যে অতীব প্রসংশা লাভেরই যোগ্য—দেশবাসীকে ইহাই বিশ্বাস করিতে বলা হয়। কিন্তু মৃদু লাঠি, সতর্কতার সহিত গুলীবর্ষণ এবং সৈন্য ও পুলিশের ধৈর্য্যগুনের পরিচয় দেশবাসী পাইতে অভ্যস্ত। তাহাতে এই ধরণের সরকারী কৈফিয়তের কোন মূল্যই তাহাদের নিকট থাকে না। স্বাধীনতাকামী বন্দীদের দমন করিবার জন্য বিদেশী শাসকবর্গ যে কোন হীন পন্থাই অবলম্বন করিয়া থাকে ইহা কাহারও অজ্ঞাত নয়। লাহোর, লালকেল্লা, নীলগঞ্জ প্রভৃতির নৃশংস ঘটনাবলীই তাহার জ্বলন্ত প্রমাণ।