পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
মুসলমান রাজত্বের ইতিহাস
আব্‌দুল করিম বি. এ.-প্রণীত

ভারতবর্ষে মুসলমান প্রবেশের অনতিপূর্বে খৃস্টশতাব্দীর আরম্ভকালে ভারত-ইতিহাসে একটা রোমাঞ্চকর মহাশূন্যতা দেখা যায়। দীর্ঘ দিবসের অবসানের পর একটা যেন চেতনাহীন সুষুপ্তির অন্ধকার সমস্ত দেশকে আচ্ছন্ন করিয়া ছিল—সেটুকু সময়ের কোনো জাগ্রত সাক্ষী, কোনো প্রামাণিক নিদর্শন পাওয়া যায় না। গ্রীক এবং শক-গণের সহিত সংঘাত তাহার পূর্বেই সমাপ্ত হইয়া গিয়াছিল। যে দ্বন্দ্বসংঘাতে চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য শালিবাহন সমস্ত ভারতবর্ষের চূড়ার উপরে জাগিয়া উঠিয়াছিলেন তাহা কেমন করিয়া একেবারে শান্ত, নিরস্ত, নিস্তরঙ্গ হইয়াছিল। নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে কোনো মহৎ ব্যক্তি বা বৃহৎ উদবোধনের আবির্ভাব হয় নাই। মুসলমানগণ যখন ভারতবর্ষের ইতিহাস-যবনিকা সবলে ছিন্ন করিয়া উদ্ঘাটন করিল তখন রাজপুত-নামক এক আধুনিক সম্প্রদায় দেশের সমুদয় উচ্চ স্থানগুলি অধিকার করিয়া মান-অভিমানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিবোধে দেশকে বিচ্ছিন্ন করিয়া তুলিতেছিল। সে জাতি কখন গঠিত হইল, কখন প্রবল হইল, কখন পশ্চিম হইতে পূর্বদেশ পর্যন্ত ব্যাপ্ত হইল, তাহারা কাহাকে দূরীকৃত করিয়া কাহার স্থান অধিকার করিল—তাহা সমস্তই ভারতবর্ষের সেই ঐতিহাসিক অন্ধরজনীর কাহিনী; তাহার আনুপূর্বিকতা প্রচ্ছন্ন। মনে হয় ভারতবর্ষ তদানীং সহসা কোথা হইতে একটা নিষ্ঠুর আঘাত, একটা প্রচণ্ড বেদনা পাইয়া নিঃশব্দ মূর্ছিত হইয়াছিল। তাহার পর হইতে আর সে নিজের পূর্বাবস্থা ফিরিয়া পায় নাই; আর তাহার বীণায় সংগীত বাজে নাই, কোদণ্ডে টংকার জাগে নাই, নির্বাণহোমাগ্নি পোবনে ঋষিললাট হইতে ব্রহ্মবিদ্যা উদ্ভাসিত হয় নাই।