পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
১১৩

ফল আছে? বল বন্দে মাতরং।” তখন দুইজনে গলা মিলাইয়া “বন্দে মাতরং” গাইল। গাইতে গাইতে দুই জনেই কাঁদিয়াছিল।


চতুর্থ পরিচ্ছেদ।

 ভবানন্দ গোস্বামী একদা রাজনগরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রশস্ত রাজপথ পরিত্যাগ করিয়া একটা অন্ধকার গলির ভিতর প্রবেশ করিলেন। গলির দুই পার্শ্বে উচ্চ অট্টালিকাশ্রেণী; সূর্য্যদেব মধ্যাহ্ণে এক একবার গলির ভিতর উকি মারেন মাত্র। তৎপরে অন্ধকারেরই অধিকার। গলির পাশের একটী দোতালা বাড়ীতে, ভবানন্দ ঠাকুর প্রবেশ করিলেন। নিম্নতলে একটী ঘরে, যেখানে অর্দ্ধবয়স্কা একটী স্ত্রীলোক পাক করিতেছিল, সেই খানে গিয়া ভবানন্দ মহাপ্রভু দর্শন দিলেন। স্ত্রীলোকটি অর্দ্ধবয়স্কা মোটা সোটা কালো কোলো, ঠোঁট পরা, কপালে উল্কি, সীমস্ত প্রদেশে কেশদাম চূড়াকারে শোভা করিতেছে। ঠন্‌ ঠন্‌ করিয়া হাঁড়ির কানায় ভাতের কাটি বাজিতেছে, ফর ফর করিয়া অলকদামের কেশগুচ্ছ উড়িতেছে, গল গল করিয়া মাগী আপনা আপনি বকিতেছে, আর তার মুখভঙ্গীতে তাহার মাথার চূড়ার নানাপ্রকার টলুনি টালুনির বিকাশ হইতেছে। এমন সময়ে ভবানন্দ মহাপ্রভু গৃহমধ্যে প্রবেশ করিয়া বলিলেনঃ—

 “ঠাকুরুণ দিদি প্রাতঃপ্রণাম!”

 ঠাকুরুণ দিদি ভবানন্দকে দেখিয়া, শশব্যস্তে বস্ত্রাদি সামলাইতে লাগিলেন। মস্তকের মোহন চূড়া খুলিয়া ফেলিবেন ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সুবিধা হইল না, কেন না সকড়ি হাত। নিষেকমসৃণ সেই চিকুরজাল—হায়! তাহাতে পূজার সময় একটী বকফুল পড়িয়া-