পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

সবজীবাগ ও খড়ে ছাওয়া কুটীর খানি। ফুলের কেয়ারী বাঁধা পথ গেছে চার দিক থেকে ঐ কুটীরেরই গোবর-লেপা আঙিনায়, গোশালা, ধানের মরাই, বাসীপুকুর, চণ্ডীমণ্ডপ তাকে করে রেখেছে বাঙলার পল্লীর নয়ন-মঞ্জুল নিখুঁত ছবি। এইখানে জীবনের মধ্যাহ্ন ভাবমগ্ন কবির চোখের কাছে এসে একদিন উদয় হবে আমার হারিয়ে ফেলা সেই দয়িত। সে যে কে, সেই কৈশোরের অপ্রতিদানের ব্যথার সঙ্গিনী, না, এই ঢাকার নিরালা জীবনে অতর্কিতে প্রবিষ্টা সচকিতা ভয়বিহ্বলা রূপের ডালি মেয়েটি, তা’ জিজ্ঞাসা করলে হয়তো ঠিক বলতে পারতুম না, কিন্তু সে যে এই দু’জনের একজন সে বিষয়ে কোন সন্দেহই ছিল না। তখনও একজন হৃদয় অন্তঃপুরের কোন্ নিভৃত ঘরের দুয়ার ভেজিয়ে লুকিয়ে আছে আর ত্রস্ত শঙ্কিত পদে আর একজন এসে সিংহাসনটিতে লাজনম্রা রাণীর মত বসেছে। আমার মত মানুষ বোধ হয় নারীকে ভাল না বেসে পারে না, হৃদয়ের দিক দিয়ে সে ওদের সবার কাছেই সমান চির পরাজিত। প্রেমের এই অসহায় স্বৈরবৃত্তি ভাল কি মন্দ কে বলবে! এই আনন্দ-নিবিড় জগতে ওরাও এসেছে অমোঘ লক্ষ্য নিয়ে ব্রহ্মবাণ হাতে আর আমরাও ব্যাকুল হয়ে আছি ওদেরই হাতে মরবার জন্যে। জগৎ-শিল্পী যাদের দু’জনকে দু’জনের দিকে দুর্ব্বার টান দিয়ে গড়েছে, পরস্পরের চোখে মুখে সর্ব্ব অবয়বে দিয়েছে আকুল স্পর্শের বেদনা, পুড়ে মরবার আগুন, ডুবিয়ে নেবার সর্ব্বনাশা সুখসিন্ধু, তাদের পরস্পরের কাছ থেকে বাঁচবার উপায় কি?

১৩৬