পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

ঢেউ ও বেগ জাগছে; সংসারে আমরা সেগুলি কাটাবার ভোগ সামগ্রী—স্ত্রী পুত্র আত্মীয় বন্ধু পাই বলেই ক্ষেপে যাইনে। কলা শিল্প সঙ্গীত এ সব হচ্ছে রূপ ও রস জগতের জোয়ারের তরঙ্গ, ঐ পথে তারা এই স্থূল জগতে নেমে আসে। গুটি দশ বার গৎ ছিল আমার সম্বল আর ছিল সস্তা স্বরলিপির বই; তাই নিয়ে আমার সঙ্গীতচর্চ্চা অদম্য উৎসাহে দিদি ও বৌদিকে মুগ্ধ করে অবাধে চলতো। আসলে বাজনাটা তবু তাল সুর কেটে কোন গতিকে বাজাতে পারলেও কণ্ঠসঙ্গীতে আমি ছিলুম একটি আস্ত “পদ্ম আঁখি আজ্ঞা দিলে আমি পদ্ম বনে যাব”, জাতীয় জীব। প্রাণভয়ে আজও আমি লোকালয়ে বিশেষতঃ রজকালয়ের কাছাকাছি কখনও গলা ছেড়ে গান গাই নি, এতটুকু বুদ্ধি ও আত্মজ্ঞান আমার আছে।

 বিকেলের দিকে বরোদার পার্কে বেড়াতে যেতুম, রাজপুরাঙ্গনারা আঁটসাঁট বদ্ধ ঢাকা ব্রুহামে বা মটর কারে বস্তাবন্দী হয়ে ব্যাণ্ড শুনতে আসতেন। দু’ চার জন তন্বী গৌরাঙ্গী পার্শী মেয়ে হাত ধরাধরি করে ছেলেদের মধ্যে রূপ ও লাবণ্যের টানা ও পোড়েন দিয়ে দিয়ে পায়চারি করতেন, দর্শকদের মুগ্ধ প্রাণের তাঁতে মোহের সূক্ষ্ম চিনাংশুকখানি বুনতে বুনতে। রূপ-ক্ষুধাতুর চোখে এই সব দুর্ল্লভ মেনকা তিলোত্তমাদের চেয়ে চেয়ে দেখাই ছিল তখনকার দিনে একটা মস্ত দরকারী কাজ, যেদিন পার্কে যাওয়া বাদ পড়ে যেতো সে দিনটা বুকের মাঝে একটা খাঁ খাঁ করা শূন্যতা রেখে যেত। আসলে প্রথম যৌবনে

১৭৮