পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তীব্র আকুতি—মা দেখা দে মা। অফিস যাওয়ার আগে স্নানটি সেরে ঠাকুর পুজো করেন ঘণ্টা দেড়েক ধরে। সেদিন শনিবার, কালীর ছবিতে নীল অপরাজিতার মালা পরিয়ে প্রদীপ জ্বেলে ধূপ-ধুনো দিয়ে পুজো করছেন, হঠাৎ দেখতে পেলেন মা কালী ছবি ছেড়ে এক পা, এক পা করে বেরিয়ে এলেন।

 Visual hallucination বা Optical hallucination রোগীর পক্ষে এই ধরনের দৃশ্য দেখা সম্ভব। এই একই ঈশ্বর দর্শনের তীব্র অনুভূতি থেকেই কারও কারও পক্ষে ঈশ্বরের বাণী শোনা সম্ভব, ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব। এই ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার মধ্যে ঈশ্বরের বাস্তব অস্তিত্বের কোনও প্রয়োজন হয় না। এগুলো শ্রবণানুভূতির ভ্রম। আরও বহু মানসিক অবস্থায় একজন মানুষের পক্ষে ঈশ্বর দর্শন সম্ভব, ঈশ্বরের বাণী শোনা সম্ভব, ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব। এই প্রেস কনফারেন্সে তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনায় না গিয়ে বলছি, আমি সার্কিট হাউজে আছি। কাল বিকেলের ফ্লাইটে কলকাতায় ফিরব। আপনাকে দেখে অনুমান করতে অসুবিধে হচ্ছে না, আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। তীব্রভাবে ঈশ্বর দর্শনে ইচ্ছুক। কাল সকালে সার্কিট হাউজে আসুন। আমার সঙ্গে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করলে কালকে আপনাকে সম্মোহিত করে আপনার মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে এমন নির্দেশ পাঠাব যে আপনি আপনার প্রার্থিত ঈশ্বরকে অবশ্যই দেখতে পাবেন। আমি ফিরে যাবার পরও আপনি আমার কথা মতো মনোসংযোেগ করে মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে স্বনির্দেশ পাঠালেই ঈশ্বর দেখতে পাবেন।

 আমার লেখাটি এতদূর পড়ে যাঁরা একটু তেড়ে-ফুঁড়ে উঠবেন, তাঁদেরকে বলি-ধীরে, একটু ধীরে। যুক্তিটুক্তি সবকিছু আবেগ নামক রসালো নির্বুদ্ধিতার কাছে জমা না রেখে, সম্মোহন করে মানসিক চিকিৎসা করেন, এমন কোনও চিকিৎসকের কাছে মানসিক রোগী সেজে গিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করলেই মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের বিচিত্র কর্মকাণ্ডের কিছুটা যা পরিচয় পাবেন, তারপর আর তেড়ে-ফুঁড়ে উঠবেন না।

 প্রেস কনফারেন্সে যা বলেছি তার বাইরেও আর অনেক কারণ আছে, যার জনা কোনও কোনও মানুষের পক্ষে ঈশ্বর দর্শন সম্ভব।

 চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে যখন আনাসথিসিয়া করেন তখন অনেক রোগী মৃত্যুভয়ে ঈশ্বরকে মনে মনে ডাকতে থাকেন এবং চেতনা হারাবার আগে বা অর্ধচেতন অবস্থায় ঈশ্বর দেখেন, মৃত্যুলোক দেখেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এল, এস, ডি, হেরোয়িনের মতো মাদক গ্রহণ করলেও অনেক সময় অদ্ভুত আনন্দ, হুরী-পরী-ঈশ্বর ইত্যাদির দেখা মেলে।

 স্বাভাবিক মানুষও ধর্মীয় উন্মাদনার শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঈশ্বর দর্শন করতে পারেন। নেচে নেচে কীর্তন গাইতে গাইতে যেমন ঈশ্বর অনুভূতি বা ঈশ্বর দর্শন হতে পারে, তেমনই সতী মায়ের থানে সতী মেলার

৬৯