পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একদিনের বিপ্লবী একটি সত্তা নিষ্ঠুর আঘাতে এমনিভাবে শেষ হয়ে যাবে ওরা তা ভাবে নি। অমৃত হাসপাতাল মর্গ থেকে ফিরছে। মনে হয় বাবা অনেক আগেই মারা গেছলেন, এই মৃত্যু তার নতুন নয়। মানসিক মৃত্যুকে সয়েও বেঁচেছিলেন তিনি। আজ সব শেষ হয়ে গেল । সুধাময়ী এখনও বিশ্বাস করতে পারে না যে, তার সব হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় মানুষটা হয়তো কাজ থেকে ফিরবে। আবার। অমৃত চুপ করে বসে আছে। বাবার মৃত্যুটাকে ভোলে নি সে। কোনো হিসােবই মেলে নি। সব জমা-খরচের খাতার পাতায় লেখা আছে শুধু খরচেরই আকগুলো, জমার ঘর খালিই রয়ে গেছে। বসন্তবাবু আজ তাদের কাছে বিস্মৃতপ্রায় একটি অধ্যায়। সুধাময়ীকে দেখে চেনা যায় না। শত অভাব দারিদ্র্যের মধ্যেও লাল-পাড় শাড়ি আর পাকা চুলে সিন্দুরের আভা তার মুখে কমনীয় একটি লক্ষ্মীশ্রী ফুটিয়ে রেখেছিল। সেইসব আজ হারিয়ে গেছে। সুধাময়ী স্তব্ধ নির্বািক হারানো একটি দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে। সুধাময়ীর সারা মনে আতঙ্কের ছায়া নেমেছে। ওই লোকটির শত্রু ছিল না। নিরীহ শান্ত মানুষটাকে রাতের অন্ধকারে কারা নিষ্ঠুর ভাবে খুন করে গেল জানে না সে। তবু মনে পড়ে সেই অন্ধকারে হানাদার ছেলের দলকে। সাবিত্রীও অন্ধকারে তাদের চিনতে পারে নি। তবু মনে হয়। ওই দলেরই কাজ এসব । ওরা শাসিয়ে গেছিল বার বার। আবার হয়তো আসবে। সুধাময়ী তাই বলে অমৃতকে। —-এখান থেকে চলে যেতে পারিস না বাবা ? একটা সর্ব্বনাশ ঘটে গেল, একটা ছেলের তো পাত্তাই নেই। তবু এখানে পড়ে থাকিবি ? অমৃত ও ভেবেছে কথাটা। এই হত্যাকান্ডের পিছনে আর কি কারণ থাকতে পারে? এ ছাড়া তার জানা নেই। অমৃত বলে। -চাকরীটিা হয়ে যাক মা, তাই যাবো। Σ, 6. Ο