পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So 8 আশুতোষ-স্মৃতিকথা ঠেকিবার কথা, এজন্য কার্য্যক্ষেত্র-হিসাবে সেই দেশেই সব রকমে ঙাহার পক্ষে সুবিধাজনক হইত, বোধহয় তাহার পরিবারবর্গের মধ্যেও কাহারও কাহারও এই ভাব ছিল। আমরা কিন্তু তাঁহার কলিকাতা ও এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়যাহা তৎকালে তঁহারই বাহু আশ্রয় করিয়াই দাড়াইয়াছিল,-তাহার এই প্রধান কর্ম্মক্ষেত্র ছাড়িয়া যাইবার জনশ্রুতিতে চঞ্চল হইলা পড়িয়াছিলাম। আমি সেই শেষবার কলিকাতায় আসার সময়ে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম—“আপনি কি সত্যই এদেশ ছাড়িয়া বিদেশে থাকা মনস্থ করিয়াছেন ?” তিনি ভ্রকুঞ্চিত করিয়া বলিলেন-“আপনারা পাগল হইয়াছেন ! কোন রাজরাজড়ার ষ্টেটের কর্ণধার হওয়ার লোভে কিংবা আর্থিক উপার্জনের - সম্ভাবনায় আমি কলিকাতা ছাড়িয়া থাকিতে পারিব না । আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরীর আওতায়ই জীবন কাটাইব ।” হয়ত তাহার। প্রাণের মধ্যে বিদেশ-গমন-সম্বন্ধে একটা আতঙ্কের ভাব চিরকালই ছিল। বিদেশে যাইয়া যে র্তাহার এই ভয়ঙ্কর পরিণাম হইবে, অমঙ্গলের ছায়া যেন কাল পূর্বেই তাহার মনে সেই ঘোর অমঙ্গলের ছায়াপাত করিয়াছিল। তিনি কলিকাতা ছাড়িয়া অন্যত্র যাইয়া সুখ বোধ করিতেন না । এখন মনে হয়, হায় পাটনা ! এই দেশের মাণিককে কয়েকটি টাকায় আকর্ষণ দিয়া লইয়া গিয়া বাঙ্গালী-জাতির কি ঘোর সর্বনাশই না করিয়াছ ! জাতীয় গৌরব-স্তম্ভের শীর্ষদেশ কি নিদারুণ বজপাতেই না ভাঙিয়াছে ! তঁহার জামাতা ও পুত্র তাহার কোর্টে ওকালতি করিতেন,-এজন্য কত লোকে কত কথা বলিত । তিনি ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষপাতী, তাহার আদৌ ছোয়াচে রোগ ছিল না। যেখানে আইনতঃ কোন বাধা নাই, সর্বোচ্চ কোটে কাজ করিবার সনন্দধারীকে তিনি কি অপরাধে তঁহার বিচারশালায় মোকৰ্দমা গ্রহণ হইতে বঞ্চিত করিবেন ? সেইরূপ করিলে র্তাহার পক্ষে অন্যায় হইত, নিজের বিচার-শক্তির উপর সন্দেহ জন্মিত এবং অসঙ্গত সাবধানতা-প্রসূত ভীরুতা চরিত্রে প্রকাশ পাইত । আমার নিজের একটা মোকৰ্দমা তঁহার আদালতে ছিল,-আমার পরাজয় হইল ।