পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
১৯৩

অনুরূপ এই যে মরুময় কটিবন্ধটি – ইহাকে বিশেষ করিয়া প্রাচীরে ঘিরিয়া রাখায় কি ফল? এখানেও সেই একই ধূসর মরুভূমি-সেই একই মসৃণ গণ্ডশৈলপুঞ্জ—যাহা দেখিয়া মনে হয়, যেন ভন্মরাশির উপর কতকগুলা বৃহৎকায় পশু দলে-দলে বসিয়া আছে। সুদূরপ্রান্তে হৈদরাবাদ দীর্ঘ শাদারেখার ন্যায় অস্পষ্ট দেখা যাইতেছে; এবং ময়দানভূমির সীমান্তদেশে এই সব গণ্ডশৈল—ছিন্নাঙ্গ পর্ব্বতের আকারে বিচিত্রভঙ্গী দুর্গের আকারে ইতস্তত পুঞ্জীকৃত হইয়া ধ্বংসনগরের বিভ্রমটিকে যেন আরো দীর্ঘীকৃত করিয়া সুদূর অসীমে প্রসারিত হইয়াছে।

 কিন্তু এই মৃতনগরের প্রাচীর ছাড়াইয়া অদূরে কতকগুলি বড়-বড় গম্বুজ রহিয়াছে, যাহা সুধালেপের দ্বারা সযত্নে ধবলীকৃত এবং যাহাতে ভগ্নাবশেষের ভাব কিছুমাত্র নাই। ছোট-ছোট বনের মধ্য হইতে এই গম্বুজগুলি সমুথিত। এই সব বনের উদ্ভিজ্জ এরূপ সরস ও তাজা যে, এই তাপদগ্ধ শুভূমিতে কিরূপে উৎপন্ন হইল, ভাবিয়া বিস্মিত হইতে হয়। এগুলি গল্কার প্রাচীন রাজাদিগের সমাধিমন্দির। মৃত ব্যক্তিদিগের প্রতি ভারতবাসীর যে স্বাভাবিক শ্রদ্ধাভক্তি, তাহারি প্রভাবে এই সকল সমাধিমন্দির অক্ষত রহিয়াছে। আবার সম্প্রতি উহার চারিধারে সমাধি-উদ্যান স্থাপিত রহিয়াছে।

 এই পরীরাজ্যের অনেক সুলতান সুলতানাই এই সব গম্বুজতলে চিরনিদ্রায় মগ্ন। কেবল উহাদের মধ্যে একজন এই নীরব সঙ্গীদিগের সহবাস হইতে বঞ্চিত; ইনি গল্কার শেষ সুলতান। ইনি পুর্ব্ব হইতেই স্বকীয় পারত্রিক নিবাস প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছিলেন। কিন্তু বিজয়ী ঔরঙ্গজেব তাহাকে তাহার রাজ্য হইতে দুরীকৃত করিয়া সেই সঙ্গে তাঁহার সমাধিমন্দির হইতেও তাঁহাকে বহিস্কৃত করিলেন। তিনি নির্বাসিত হইয়া প্রবাসেই ইহলীলা সংবরণ করেন।

 এই চিরবিশ্রামের স্থানগুলি অতীব সুন্দর। আমাদের দেশের ন্যায়