পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।
৩১৭

অক্ষরে মুসলমানি লিপি লিখিত রহিয়াছে। এবং কোন[১] অজ্ঞাতযুগের একটি লৌহ-ধ্বজস্তম্ভ সমুত্থিত—সমস্তই কৃষ্ণবর্ণ ও সংস্কৃত অক্ষরে সমাচ্ছন্ন; উহার চারিদিকে কতকগুলা সমাধিস্তম্ভ এবং সান-বাঁধানো একটা মুক্ত প্রাঙ্গণ। পূর্ব্বে এই প্রাঙ্গণটি একটি খুব পবিত্র মস্‌জিদের অন্তঃপ্রাঙ্গণ ছিল। ‘পৃথিবীর মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সুন্দর’ বলিয়া সেই সময়ে এই মস্‌জিদের খ্যাতি ছিল।

 নীচে, সানের উপর ‘তুড়ুক-তাড়ুক’ লম্ফঝম্ফ!…বাচ্ছারা পিছনেপিছনে চলিয়াছে—তিনটা ছাগল প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করিল এবং কোন ইতস্তত না করিয়া, যেন চিরাভ্যস্ত এইভাবে আমার এই উপরের বারাণ্ডায় উঠিয়া আসিল এবং মাধ্যাহ্নিক নিদ্রার জন্য ছায়ায় আসিয়া শয়ন করিল। কতকগুলি কাক এবং কতকগুলি ঘুঘুও আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিল। সকলেই এখন ঠাণ্ডা জায়গা খুঁজিতেছে এবং ছায়ায় বসিয়া নিদ্রা যাইবার উদেযাগ করিতেছে। এখন নিস্তব্ধতার একাধিপত্য; সেই উড়ন্ত মরা-পাতার মর্মরশব্দও এখন আর শুনা যায় না; কেন না, অন্যান্য পদার্থের ন্যায় বায়ুও এখন নিদ্রামগ্ন। আমার ঢাকা-বারাণ্ডার প্রান্তদেশে একটি ক্ষুদ্র গবাক্ষ আছে, সেখান হইতে বহির্দ্দেশ দেখা যায়; সেখান হইতে আকাশও দেখা যাইবার কথা; কিন্তু না, দেখিলাম শুধু গোলাপী ‘জমি’র উপর একটা শাদা জমি যেন অস্পষ্ট দূরদিগন্তে সটানভাবে বিলম্বিত; দেখিলাম বৃহৎ মিনারের পার্শ্বদেশ, তাহার পাথরের গোলাপী রং এবং তাহাতে যে মার্ব্বেলের টুক্‌রাসকল বসানো আছে, তাহার শাদা রং।…

  1. স্মৃতিস্তম্ভটি ২০ ফিট উচ্চ; উহার শিলালিপিতে এইরূপ লিখিত আছে যে, বাহিলকদিগের উপর জয়লাভ করিয়া রাজা ধব এই স্মৃতিস্তম্ভটি উঠাইয়াছেন। বোধ হয় ৩ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি কোন সময়ে। প্রাচীনকালের ইহা একটি অপূর্ব্ব অতুলনীয় স্মৃতিস্তম্ভ।