পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রভাতমহিমা।
৩৪৭

ভিজিয়া যাইতেছে। বোধ হয়, তাঁহার ধ্যানকে ঘনাইয়া তুলিবার জন্য, তাঁহার সম্মুখে সামান্য-ধরণের পবিত্র সঙ্গীত চলিতেছে; আর একটু উপরে, দুইজন বালক দুইটা পাথরের নোড়ার উপর বসিয়া প্রফুল্লভাবে মৃদুমৃদু হাসিতেছে; উহাদের মধ্যে একটি বালক, ভোঁ-ভো-শব্দে শঙ্খনাদ করিতেছে; আর একটি, ডুগি বাজাইতেছে; ইহা হইতে একপ্রকার চাপাশব্দ নির্গত হইতেছে। চারিধারে কাকেরা ইতস্তত বসিয়া আছে—মনোযোগসহকারে সন্ন্যাসীকে নিরীক্ষণ করিতেছে। যাহারা গৃহাভিমুখে চলিয়াছে—কি রমণী, কি বালক—তাহারা সকলেই আবার পথ হইতে ফিরিয়া এই সন্ন্যাসীকে প্রণাম করিতেছে। নীরবে শুধু একটু সস্মিত অভিবাদন করিয়া, জোড়হস্তে শুধু প্রণাম করিয়া তাহারা সন্তর্পণে চলিয়া যাইতেছে—পাছে সন্ন্যাসীর ধ্যানভঙ্গ হয়—পূজার ব্যাঘাত হয়। রহস্যময় প্রাসাদঅঞ্চল পর্য্যন্ত গমন করিয়া আমার নৌকা আবার ফিরিয়া আসিল। ফিরিয়া আসিতে একঘণ্টা বিলম্ব হইল। ফিরিয়া-আসিয়া দেখি, সেই বৃদ্ধটি সেইখানেই রহিয়াছে। দীর্ঘনখবিশিষ্ট হস্তের দ্বারা স্বকীয় শীর্ণপদ ধরিয়া রহিয়াছে; তাহার দৃষ্টি সেইরূপ স্থির—আকাশের দিকে, জলন্ত সূর্য্যের দিকে নেত্র উদ্ঘাটিত রহিয়াছে, তবু সেই ঘোলা-চোখ্‌ ঝল্‌সিয়া যাইতেছে না। আমি বলিলাম—“বৃদ্ধটি কেমন স্থির হইয়া রহিয়াছে?” ..মাজি আমার দিকে তাকাইল এবং কোন অবোধ শিশুর নিতান্ত সরল উক্তি শুনিয়া লোকে যেমন করিয়া থাকে - সেইরূপ আমার দিকে চাহিয়া সে একটু মৃদুহাস্য করিল।—“ঐ লোকের কথা বল্‌চেন?…কিন্তু…ও যে মৃত!”

 কি! ও লোকটা মৃত!… আসল কথা,—আমি লক্ষ্য করি নাই, বালিশের উপর মাথা আট্‌কাইয়া রাখিবার জন্য, থুতির নীচে দিয়া একটা চর্মবন্ধনী গিয়াছে। আমি ইহাও লক্ষ্য করি নাই,—একটা কাক মুখের চারিধারে ও মুখের খুব কাছে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে; যে বলিষ্ঠকায় যুবকটি তাহার গেরুয়া রঙের পরিচ্ছদে ও জুঁইফুলের মালায় জলসেক করিতেছিল,