ঘুমাইয়াছে, ইঁহাদগকে কি এখন জাগানো যায়? নাহয় তোমার ভাইকে পাঠাইয়া দাও, আমার তাহাতে আপত্তি নাই৷
এদিকে রাক্ষসের আর বিলম্ব সহ্য না হওয়ায়, সে নিজেই আসিয়া উপস্থিত। তাহাতে হিড়িম্বা নিতান্ত ভয় পাইয়া বলিল, শীঘ্র তোমরা আমার পিঠে উঠ, আমি এখনো তোমাদিগকে লইয়া আকাশে উড়িয়া যাইতে পারি৷
ভীম বলিলেন, ‘তোমার কোনো ভয় নাই, আমার গায় ঢের জোর আছে মানুষ বলিয়া আমায় অবহেলা করিও না!’
হিড়িম্বা বলিল, ‘ঐ দুষ্ট মানুষকে ধরিয়াই মারিয়া ফেলে, তাই আমি ভয় পাই। তোমাকে অবহেলা করিতেছি না৷’
এ-সকল কথা শুনিয়া রাক্ষসের কিরূপ রাগ হইল, বুঝিতেই পার। সে ভীমকে আগে মারিবে, না হিড়িম্বাকেই আগে মারিবে ঠিক করিতে পারিতেছে না। হাউ-মাউ করিয়া সে বন মাথায় করিয়া তুলিল৷
ভীম বলিলেন, ‘মাটি করিল! আরে চুপ চুপ! হতভাগা, ইঁহাদের ঘুম ভাঙ্গিয়া দিবি?’
রাক্ষস ষাঁড়ের মতন শব্দ করিয়া বলিল, ‘মুহি তো তোদ্ধের্র্কে খাবো, ওহার্র্ লোকের ঘুম ভেঙ্গিবেক কেনে?’ এই বলিয়া সে দুই হাত ছড়াইয়া ভীমকে ধরিতে গেল৷
ভীম তাহার হাত দুটা ধরিয়া হাসিতে হাসিতে তাহাকে খানিক দূরে লইয়া গেলেন৷
তখন বন তোলপাড় গাছপালা চুরমার করিয়া দুজনে কি বিষম যুদ্ধ ই আরম্ভ হইল। পাণ্ডবদের আর নিদ্রা যাওয়া হইল না। হিড়িম্বা সেইখানে বসিয়াছিল। কুন্তী চক্ষু মেলিয়া তাহাকে দেখিয়া যারপরনাই আশ্চর্যের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘মা! তুমি কি এই বনের দেবতা, না কোনো অপ্সরা? এমন সুন্দর তো আমি কখনো দেখি নাই! তুমি কে, কিজন্য আসিয়াছ?’
হিড়িম্বা বলিল, ‘মা! আমি রাক্ষসের মেয়ে, আমার নাম হিড়িম্বা, আমার দাদা হিড়িম্ব আর আমি এই বনে থাকি। আপনাদিগকে দেখিয়া দাদা বলিল, উহাদিগকে ধরিয়া আন্, খাইব৷’ আপনারা ঘুমাইতেছিলেন, আর আপনাদিগকে পিঠে করিয়া এখান হইতে কোনো ভালো জায়গায় লইয়া যাইতে চাহিয়াছিলাম, কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হইলেন না। শেষে আমার দেরি দেখিয়া দাদা নিজেই আসিয়া উপস্থিত হইল। ঐ দেখুন, আপনার সেই ছেলেটির সঙ্গে কেমন যুদ্ধ চলিতেছে!’
এ কথা শুনিবামাত্র যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকুল আর সহদেব ভীমের নিকট ছুটিয়া চলিলেন। অর্জুন ভীমকে ডাকিয়া বলিলেন, দাদা! পরিশ্রম হইয়াছে কি? ভয় নাই, আমি তোমায় সাহায্য করিতেছি৷
ভীম বলিলেন, ‘ভয় নাই ভাই! হতভাগাকে কাবু করিয়া আনিয়াছি!
অর্জুন বলিলেন, ‘শীঘ্র উহাকে মারিয়া ফেল। নহিলে দুষ্ট আবার কোনো ফাঁকি-টাকি দিয়া বসিবে, ইহারা বড়ই ধূর্ত। তুমি নাহয় একটু বিশ্রাম কর, আমি উহাকে মারিতেছি৷’
ইহাতে ভীম তখনই ক্রোধভরে রাক্ষসকে তুলিয়া সাংঘাতিক এক আছাড় দিলেন। তারপর উহার দেহটাকে মট্ করিয়া ভাঙ্গিতেই উহার প্রাণ বাহির হইয়া গেল। মরিবার সময় রাক্ষসটা এমনি ভয়ানক চ্যাঁচাইতেছিল যে কি বলিব!