পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

রহিয়াছি, তোমরা আমাদের কথা কি করিয়া জানিলে?”

 কৃষ্ণ বলিলেন, “আগুন কি কাপড়ে চাপা থাকিতে পারে? যে কাণ্ডকারখানা আজ হইয়াছে, আপনারা নহিলে আর কে তাহা করিবে? কি ভাগ্য যে আপনারা সেই দুষ্টদের হাত হইতে বাঁচিয়া আসিয়াছেন৷”

 এইরূপ খানিক কথাবার্তা কহিয়া কৃষ্ণ আর বলরাম সেখান হইতে চলিয়া গেলেন৷

 এখানকার ঘটনা তো এইরূপ। ওদিকে দ্রুপদ আর তাঁহার লোকেরা না জানি কি করিতেছেন! তাঁহাদের মনে খুবই চিন্তা, তাহাতে আর ভুল কি? দ্রৌপদী কাহার হাতে পড়িলেন, যে দুজনে তাঁহাকে লইয়া গেল, তাহারা কে, কিরূপ লোক, কিছুই জানা নাই। এমন অবস্থায় আপনার লোকেরা মন কি স্থির থাকিতে পারে? কাজেই ধৃষ্টদ্যুম্ন কয়েকটি লোক লইয়া চুপিচুপি সেই দুজনের পিছু পিছু চলিলেন। চল আমরাও ইহাদের সঙ্গে সঙ্গে যাই৷

 ঐ সেই দুজন দ্রৌপদীকে লইয়া চলিয়াছে। ব্রাহ্মণেরা অনেকেই উহাদের সঙ্গে যাইতেছে। যে লক্ষ্য বিধিয়াছিল, দ্রৌপদী যেন খুব আহ্লাদের সহিত তাঁহার আসনখানি বহিয়া চলিয়াছেন উহারা কোথায় যায়, দেখিতে হইবে৷

 তাইতো উহারা যে কুমারের বাড়ি ঢুকিল! আচ্ছা দেখা যাউক এরপর কি করে। সেখানে আরো কাহারা আছে। তিনজন পুরুষমানুষ। ঠিক ইহাদেরই মতো তাহাদেরও চেহারা, নিশ্চয় ইহাদের ভাই হইবে। আর ঐ বুড়া স্ত্রীলোকটি কে? তাহার শরীরে কেমন তেজ দেখিয়াছ? খুব বড়ঘরের মেয়ে, তাহতে সন্দেহ নাই, বোধহয় ইহাদের মা, নহিলে ইহারা আসিয়া তাহাকে প্রণাম করিবে কেন?

 দ্রৌপদীকে সেই স্ত্রীলোকটির কাছে রাখিয়া উহারা কোথায় বাহির হইয়া গেল? বোধহয় ভিক্ষায়৷

 ঐ তাহারা ভিক্ষা লইয়া ফিরিয়াছে, আর দেখ, ছেট চারিজন তাহাদের ভিক্ষার জিনিস তাহাদের বড় ভাইটির সামনে আনিয়া রাখিতেছে উহারা নিশ্চয় খুব ধার্মিক লোক! দেখ না, সকলের আগে ভিক্ষার জিনিস দেবতাকে দিল। আর দেখ কেমন দাতা, উহার ভিতর হইতে আবার ব্রাহ্মণদিগকে ভিক্ষা দিতেছে!

 আচ্ছা উহারা তো সাতজন লোক, কিন্তু ভিক্ষার জিনিস মোটে দুইভাগ করিল কেন? ওহ! দেখিয়াছ? একভাগের তাবতই ঐ ষণ্ডাটি একলা নিল! তা উহার যেমন শরীর, আহরটি তো তেমনই চাই। কম খাইলে কি আর এত বড় গাছ লইয়া রাজামহাশয়দিগকে এমন সাজাটি দিতে পারিত? উহার ওটুকু চাই। বাকি অর্ধেকের ভাগ হইল, আর ছয়জনে খাইবে৷

 বাঃ! ভিখারির খাওয়া-দাওয়া তো বেশ সহজ। ঐ শেষ হইয়া ইহারই মধ্যে সব পরিষ্কার। ছোট দুটি ভাই কুশ বিছাইতেছে। বিছানাও বেশ পরিষ্কার, কুশের উপর হরিণের ছাল, বেশ তো! পাঁচ ভাই দক্ষিণশিয়রী হইয়া শুইল। উহাদের মা উহাদের মাথার কাছে, আর ঐ দেখ দ্রৌপদী পায়ের কাছে শুইলেন। কিন্তু দেখিলে? পায়ের কাছে শুইয়াই কেমন সুখী!

 শোন, শোন! উহারা কি কথাবার্তা বলে। যুদ্ধের কথা, অস্ত্রশস্ত্রের কথা। কি সুন্দর কথাবার্তা। ইহারা নিশ্চয় ক্ষত্রিয় আর বড়লোক। চল যাই, রাজাকে বলি গিয়া৷