রঙ কাঁচা সোনার মতো, আর তেজ প্রভাতের সূর্যের মতো৷
ব্রাহ্মণ বলিলেন, আমি ব্রাহ্মণ, আমার একটু বেশি করিয়া খাওয়া অভ্যাস। আপনাদের নিকট আমি কিছু জলযোগের প্রার্থনা করি৷
কৃষ্ণ আর অর্জুন বলিলেন, আপনি কি খাইতে চাহেন বলুন, আমরা আনিয়া দিতেছি। ব্রাহ্ম বলিলেন, “মিঠাই মণ্ডা, ভাত ব্যঞ্জন আমি কিছুই খাই না! আমি খাণ্ডব নামক বনটিকে খাইব, আপনারা তাহারই উপায় করিয়া দিন৷”
কি অদ্ভুত জলযোগ! আর ব্রাহ্মণটিও যে কম অদ্ভুত নহে, তাহা তাঁহার পরিচয় শুনিলেই বুঝিতে পারিবে। ব্রাহ্মণ বলিলেন, “আমি অগ্নি। আমার নিতান্ত ইচ্ছা, খাণ্ডব বনটাকে খাই! কিন্তু সেই বনে ইন্দ্রের বন্ধু তক্ষক নাগ আর তাহার পরিবার থাকাতে, আমি সেখানে গেলেই ইন্দ্র বৃষ্টি ফেলিয়া আমাকে নিবাইয়া দেন। তাই আমি আপনাদের নিকট আসিয়াছি। আপনারা যদি বৃষ্টি থামাইয়া আর বনের জন্তুগুলিকে আটকাইয়া রাখিতে পারেন, তবে আমার কিঞ্চিৎ ভোজন হয়৷”
ব্যাপারখানা কি জান? শ্বেতকী বলিয়া এক রাজা ছিলেন, তাঁহার প্রধান কাজ ছিল কেবল যজ্ঞ করা। সে কি যেমন-তেমন যজ্ঞ? তাঁহার যজ্ঞে খাটিয়া খাটিয়া মুনিরা রোগা হইয়া গেলেন, ধোঁয়ায় তাঁহাদের চোখে ছানি পড়িল, শেষে আর না পারিয়া তাঁহারা রাজার কাজই ছাড়িয়া দিলেন৷
ইহাতে নিতান্ত দুঃখিত হইয়া শ্বেতকী শিবের তপস্যা আরম্ভ করাতে, শিব বলিলেন, “তুমি বারো বৎসর ক্রমাগত অগ্নিকে ঘি খাওয়াইয়া খুশি কর, তারপর দেখা যাইবে৷”
রাজা ক্রমাগত বারো বৎসর অগ্নিকে ঘি খাওয়াইলেন। তাহাতে শিব সন্তুষ্ট হইয়া দুর্বাশা মুনিকে দিয়া তাঁহার যজ্ঞ করাইয়া দিলেন৷
রাজার যজ্ঞ হইল বটে, কিন্তু এত ঘি অগ্নির সহ্য হইল না। তাঁহার পেট ভার হইল, ক্ষুধা মরিয়া গেল, কাজেই তখন বেচারা ব্যস্তভাবে ব্রহ্মার নিকট গিয়া উপস্থিত হইলেন। ব্রহ্ম তাঁহার কথা শুনিয়া বলিলেন, “এত ঘি খাইয়াছ, তাই তোমার মন্দাগ্নি হইয়াছে (অর্থাৎ ক্ষুধা চলিয়া গিয়াছে)। এখন খুব খানিকটা মাংস খাও গিয়া, তবেই সারিয়া যাইবে। খাণ্ডব বনে অনেক জন্তু থাকে, সেটাকে পোড়াইতে পার তো তোমার কাজ হয়!”
অগ্নি তখনই খাণ্ডব বনে চলিয়া আসিলেন। সেখানে আসিয়া তাঁহার কিরূপ দশা হইয়াছিল, তাহা শুনিয়াছ। তিনি কেবল ইন্দ্রের কথাই বলিয়াছেন, কিন্তু সেই বনের জন্তুরাও তাঁহাকে কম নাকাল করে নাই। সেখানকার হাতি-গুলি শুঁড়ে করিয়া জল ঢালিয়া তাঁহাকে নিবাইয়া দিল। অন্য জন্তুরাও তাঁহার কতই দুর্গতি করিল। সাতবার সেই বন পোড়াইতে গিয়া,সাতবারই তিনি এইরূপে জব্দ হইয়া ফিরিয়া আসিলেন৷
শেষে ব্রহ্মা তাঁহাকে বলিলেন, “তুমি কৃষ্ণ আর অর্জুনের কাছে যাও, তাঁহারা চেষ্টা করিলে ইন্দ্রকেও আটকাইতে পারেন, জন্তুদিগকেও থামাইয়া রাখিতে পারেন৷” তারপর কি হইয়াছে তোমরা জান৷
অগ্নির কথা শুনিয়া অর্জুন বলিলেন, “আমার তেমন ভালো ধনুক বা রথ নাই, আর কৃষ্ণের হাতেও অস্ত্র নাই। আমাদিগকে এ-সকল জিনিস আনিয়া দিলে আমরা আপনার কাজ করিতে প্রস্তুত আছি৷”