বলুন দেখি।”
অর্জুন বলিলেন, “অর্জুন মানে সাদা, নির্মল। আমি নির্মল কাজ করি, এইজন্য আমি অর্জুন। দেশ জয় করিয়া ধন আনি, তাই আমি ধনঞ্জয়। যুদ্ধে আমি সর্বদাই জয়লাভ করি, তাই আমি বিজয়। আমার রথের ঘোড়াগুলি সাদা, তাই আমি শ্বেতবাহন। আমার জন্মের দিন উত্তফাল্গুনী নক্ষত্র ছিল, তাই আমি ফাল্গুনী। দৈত্যদিগকে হারাইয়া ইন্দ্রের নিকট কিরীট, অর্থাৎ মুকুট পুরস্কার পাইয়াছিলাম, তাই আমি ‘কিরীট’। যুদ্ধের সময় আমি বীভৎস অর্থাৎ নিষ্ঠুর কাজ করি না, তাই আমি বীভৎসু। আমি সব্য অর্থাৎ বাম হাতেও ডান হাতের ন্যায় তীর ছুঁড়িতে পারি, তাই আমি সব্যসাচী। ভয়ানক শত্রুকেও আমি জয় করিয়া থাকি তাই আমি বিষ্ণু আর রঙ কালো বলিয়া আমি কৃষ্ণ৷”
তখন উত্তর জোড়হাতে অর্জুনকে নমস্কার করিয়া, বিনয়ের সহিত বলিলেন, “মহাশয়! আমি না জানিয়া আপনার নিকট অনেক অপরাধ করিয়াছি আমাকে ক্ষমা করুন৷”
অর্জুন বলিলেন, “আমি তোমার উপর কিছুমাত্র অসন্তুষ্ট হই নাই। ভয় পাইও না, অস্ত্রগুলি রথে তোল, তোমার গরু ছাড়াইয়া দিতেছি”৷
এতক্ষণে উত্তরের খুবই সাহস হইয়াছে, কারণ অর্জুন সঙ্গে থাকিলে আর কিসের ভয়? এরপর আর সারথির কাজ করিতে তিনি কিছুমাত্র আপত্তি করিলেন না৷
তারপর অর্জুন হাত হইতে বালার গোছা খুলিয়া, ঝকঝকে সোনালি কবচ আঁটিয়া পরিলেন। সাদা কাপড় দিয়া মাথার বেণী বেশ করিয়া বাঁধিলেন। শেষে সেই সুন্দর রথে চড়িয়া, নানারূপ অস্ত্র মনে মনে ডাকিবামাত্র তাহারা উপস্থিত হইয়া জোড়হতে বলিল, ‘আমরা আসিয়াছি, কি করিতে-হইবে অনুমতি করুন৷’
অর্জুন বলিলেন, ‘তোমরা যুদ্ধের সময় আমার সঙ্গে থকিয়া আমার কাজ করিবে৷’
এইরূপে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইয়া, অর্জুন গাণ্ডীবে টঙ্কার ও তাঁহার বিশাল শঙেখ ফুঁ দিবামাত্র, উত্তর ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে রথের ভিতরে বসিয়া পড়িলেন৷
তাহা দেখিয়া অর্জুন বলিলেন, ‘কি হইয়াছে? ভয় পাইতেছ কেন?’
উত্তর বলিলেন, ‘উঃ! আমার কান ফাটিয়া গেল! মাথা ঘুরিয়া গেল! শঙ্খের আর ধনুকের শব্দ এমন ভয়ানক হইতে পারে তাহা তো আমি জানিতাম না!’
যাহা হউক শেষে উত্তরের ভয় গেল।
এদিকে সেই ধনুকের টঙ্কার আর শঙ্খের শব্দ শুনিয়া, কৌরবদের আর বুঝিতে বাকি রহিল না যে, উহা অর্জুনেরই ধনুক আর শঙ্খ। দুর্যোধনের তখন ভারি আনন্দ। তিনি ভাবিলেন যে, অর্জুন সময় ফুরাইবার পূর্বেই দেখা দিয়াছেন, সুতরাং পাণ্ডবদিগকে আবার বারো বৎসর বনবাস করিতে হইবে৷
কর্ণের খুবই উৎসাহ। তিনি ভাবিলেন যে, অর্জুনকে মারিয়া একটা নিতান্তই বাহাদুরির কাণ্ড করিবেন৷
যাঁহারা একটু শান্ত আর ধার্মিক, তাঁহারা বলিলেন, ‘আজ অর্জুনের হাতে বড়ই বিপদ দেখা যাইতেছে সকলে সাবধানে থাকুন!’
এইরূপে নানারকম কথাবার্তা হইতেছে। কেহ বলিতেছেন, ‘অজ্ঞাত বাসের এখনও বাকী আছে৷’ কেহ বলিতেছেন, ‘না বাকী নাই, তাহা হইলে অর্জুন কখনই এমন করিয়া আসিতেন