যুদ্ধের পূর্বে দুর্যোধন ভীষ্মকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “দাদামহাশয়, আপনি একেলা যথাসাধ্য যুদ্ধ করিলে কত সময়ের মধ্যে পাণ্ডবদিগের সকল সৈন্য মারিয়া শেষ করিতে পারেন?”
ভীষ্ম বলিলেন, “আমি ইচ্ছা করিলে এক মাসে পাণ্ডবদের সকল সৈন্য মারিতে পারি৷”
এই কথা একে একে দ্রোণ, কৃপ, অশ্বথামা আর কর্ণকে জিজ্ঞাসা করিলে, দ্রোণ বলিলেন, “আমিও এক মাসে পারি৷”
কৃপ বলিলেন, “আমার দুমাস লাগে৷”
অশ্বথামা বলিলেন, “আমার দশদিন লাগে৷”
কর্ণ বলিলেন, “আমি পাঁচদিনেই উহাদের সকল সৈন্য মারিয়া শেষ করিতে পারি৷”
কর্ণের কথা শুনিয়া ভীষ্ম হো হো শব্দে হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “অৰ্জুনের সঙ্গে কিনা এখনো দেখা হয় নাই, তাই তুমি এমন কথা বলিতেছ৷”
যুধিষ্ঠিরের চরেরা ভীষ্ম দ্রোণ প্রভৃতির এই সকল কথা শুনিয়া তাহা যুধিষ্ঠিরের নিকট গিয়া বলাতে, তিনি অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “অৰ্জুন, তুমি কতক্ষণে কৌরবদিগের সৈন্য মারিয়া শেষ করিতে পার?”
অৰ্জুন বলিলেন, “কৃষ্ণ সহায় থাকিলে, আমি এক নিমিষে সকল শেষ করিয়া দিতে পারি। শিব আমাকে পাশুপত নামক যে অস্ত্র দিয়াছিলেন তাহা আমার নিকট আছে। ইহা দিয়া তিনি প্রলয়ের সময় সকল সৃষ্টি নাশ করেন। এ অস্ত্রেব সংকেত ভীষ্মও জানেন না, দ্রোণও জানেন না, কৃপ, অশ্বথামা বা কর্ণও জানেন না। এ সকল বড়-বড় অস্ত্র সাধারণ যুদ্ধে ব্যবহার করিতে নাই। আমরা সাদাসিধা যুদ্ধ করিয়াই জয়লাভ করিব৷”
কুরুক্ষেত্রের পশ্চিমভাগে, দুর্যোধনের শিবির হইয়াছিল। যুদ্ধের দিনের, নির্মল প্রভাতে, তাঁহার লোকেরা স্নানান্তে মালা আর সাদা কাপড় পরিয়া অসীম উৎসাহ ভরে সেইখানে আসিয়া দাঁড়াইলেন।
মাঠের পূর্বভাগে পশ্চিমমুখ হইয়া যুধিষ্ঠিরের দলও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সহস্ৰ সহস্র ঢাক আর অযুত শঙ্খ মহাঘোররবে তাঁহাদিগকে উৎসাহিত করিতেছে।
ভীষ্মপর্ব
দ্ধ আরম্ভ করিবার পূর্বে এইরূপ নিয়ম হইল যে, যে ব্যক্তি অস্ত্র ফেলিয়া যুদ্ধ ছাড়িয়া দিয়াছে, যে আশ্রয় চাহিতেছে, আর যে অন্যের সহিত যুদ্ধে ব্যস্ত, এরূপ লোককে কে বধ করিবে না। যুদ্ধের সময় ছাড়া অন্য সময় দুই দলের লোকই বন্ধুর মতো ব্যবহার করবে। গালির উত্তরে শুধু গালিই দিবে, অস্ত্রাঘাত করিবে না। যুদ্ধের স্থান হইতে কেহ বাহির হইয়া গেলে, আর তাহাকে মারিবে না। রথী রথীর সহিত, হাতি হাতির সহিত, ঘোড়া ঘোড়ার সহিত, পদাতি পদাতির সহিত, এইভাবে যুদ্ধ