সেই অবধি আমি, আমার অবশিষ্ট শরীরটুকু স্বর্ণময় করিবার আশায় যজ্ঞস্থান দেখিলেই তাহাতে গড়াগড়ি দিয়া থাকি। আজ মহারাজ যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞের কথা শুনিয়া, অনেক আশায় এখানে আসিয়া গড়াগড়ি দিলাম কিন্তু আমার শরীর সোনার হইল না! তাই বলিতেছি যে, সেই গরিব ব্রাহ্মণ যে অতিথিকে ছাতু খাওয়াইয়াছিল, তাহা ইহার চেয়ে বড় কাজ৷”
এই বলিয়া সেই নেউল তথা হইতে প্রস্থান করিল।
আশ্রমবাসিকপর্ব
জা হইয়া যুধিষ্ঠির ধৃতরাষ্ট্র এবং গান্ধারীর সহিত এমন মিষ্ট ব্যবহার করিতে লাগিলেন যে তাহাতে তাঁহারা তাঁহাদের সকল দুঃখ ভুলিয়া গেলেন। দুর্যোধনের কথা মনে করিয়া এখন যুধিষ্ঠিরের উপরে তাঁহাদের রাগ হওয়া দূরে থাকুক, বরং যুধিষ্ঠিরের গুণের কথা ভাবিয়া দুর্যোধনকেই অতিশয় দুষ্ট লোক বলিয়া বোধ হইতে লাগিল।
যুধিষ্ঠির ইঁহাদের সহিত যেরূপ ব্যবহার করিতেন, অর্জুন, নকুল, সহদেব, কুন্তী, দ্রৌপদী প্রভৃতিও সেইরূপই ব্যবহার করিতেন। বাস্তবিক ইঁহাদেব নিকট ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারী যেমন ভক্তি ও ভালবাসা পাইতে লাগিলেন, নিজ পুত্রগণের নিকটও তাহা পান নাই।
পনেরো বৎসর এইরূপে কাটিয়া গেল। ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবদিগকে পূর্বে যে মন্ত্রণা দিয়াছিলেন, তাঁহার দুঃখের কথা ভাবিয়া ক্রমে আর সকলেই তাহা ভুলিয়া গেলেন; কিন্তু ভীম তাহা কিছুতেই ভুলিতে পারিলেন না। এজন্য অন্য সকলের ন্যায় ধৃতরাষ্ট্রকে সম্মান এবং ভালোবাসা দানে তিনি অক্ষম হইলেন।
ভীমের এই ভাব ক্রমেই বাড়িতে লাগিল। শেষে এমন হইল যে, তিনি গোপনে ধৃতরাষ্ট্রের অসম্মান করিতেও ত্রুটি করেন না। ইহাতে ধৃতরাষ্ট্রের কিরূপ কষ্টের কারণ হইল, তাহা বুঝিতেই পার।
এই সময়ে ভীম একদিন, যুধিষ্ঠির, অর্জুন প্রভৃতির অসাক্ষাতে ধৃতরাষ্ট্র এবং গান্ধারীকে শুনাইয়া, নিজ বন্ধুগণের নিকট বলিতেছিলেন, “আমি আমার এই চন্দন মাখা দুখানি হাত দিয়াই ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদিগকে বধ করিয়াছি৷”
একথা শুনিয়া গান্ধারী চুপ করিয়া রহিলেন। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র ইহা সহ্য করিতে না পারিয়া, তখনি নিজের বন্ধুদিগকে ডাকাইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, “হে বন্ধুগণ! আমিই যে এই কুরুবংশ নাশের মূল, তাই তোমরা জান। সকলে যখন আমাকে হিতবাক্য বলিয়াছিল, তখন আমি তাই শুনি নাই এতদিনে সেই পাপের দণ্ড গ্রহণ করিতেছি। এখন আমি আর গান্ধারী প্রতিদিন মৃগচর্ম পরিধান, মাদুরে শয়ন এবং দিনান্তে যৎকিঞ্চিৎ ভোজনপূর্বক ভগবানের নাম লইয়া দিন কাটাই। একথা জানিলে যুধিষ্ঠিরের অতিশয় ক্লেশ হইবে বলিয়া, কাহারো নিকট