করিয়া তাহার দ্বারা কতই কাণ্ড হইল। কিন্তু টিউর ঘরে আর তাহা ফিরিয়া আসিল না।
ওডিনের আর-এক পুত্র থরের (Thor) নামে ইংরাজি থার্সডে (Thursday) হইয়াছে। থরের মত জোর কোনো দেবতার ছিল না, দেখিতেও কেহ তাহার মত এমন বিশাল ছিলেন না। তাঁহার হাতুড়ি দিয়া যাহাকেই তিনি ঠাঁই করিয়া মারিতেন, সে পাহাড়ই হউক, আর পর্বতই হউক, তখনই গুঁড়া হইয়া যাইত। স্বর্গে বাইফ্রেস্ট্ নামে বিচিত্র সেতু আছে (যাহাকে তোমরা বল রামধনু)। সেই সেতুর উপর দিয়া দেবতারা যাওয়া আসা করিতেন। অর্থাৎ আর সকল দেবতারাই করিতেন— কিন্তু থর্ কখনো সেই সেতুর উপর যাইতেন না, গেলে তাহা ভাঙিয়া পড়িত।
ফ্রাইডে (Friday,শুক্রবার) যাহার নামে হইয়াছে, তাহার নাম ছিল ফ্রিয়া (Freya)। তিনি ছিলেন সৌন্দর্যের দেবতা। কেহ বলে, ইনিই ওডিনের রাণী ফ্রিগ্গা। যুদ্ধে যত বীরের মৃত্যু হইত, তাহাদের অর্ধেক ফ্রিয়ার কাছে যাইত। ফ্রিয়া তাঁহার সঙ্গিনী ভ্যাল্কীরদিগকে লইয়া সেই বীরদিগকে নিতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসিতেন। তাঁহার সভায় গিয়া বীরদিগের সুখের আর সীমা পরিসীমা থাকিত না। সেখানে হাইদ্রন্ নামে ছাগল ছিল, তাহার দুধ ছিল অমৃতের মত, সে দুধ দোহাইয়া শেষ করা যাইত না। আর সেহ্রিম্নির নামে যে শুয়োরটি ছিল, তাহার মাংসও ছিল তেমনি মিষ্ট। এলধ্রিম্নির নামে পাচক তাহা ততোধিক মিষ্ট করিয়া রাঁধিত। বীরের ক্ষুধা-বুঝিতেই পার, তাহারা খাইত কেমন! কিন্তু সে মাংস কিছুতেই ফুরাইত না। খাওয়া দাওয়া শেষ হইয়া গেলে আবার যেমন শুয়োর তেমনটি বাঁচিয়া উঠিয়া ঘোঁত্ ঘোত্ করিতে থাকিত।
ঠানদিদির বিক্রম
আমাদের এক ঠানদিদি ছিলেন। অবশ্য ঠাকুরদাও ছিলেন, নইলে ঠানদিদি এলেন কোত্থেকে? তবে ঠাকুরদাদাকে পাড়ার ছেলেরা ভালরকম জানত না। ঠাকুরদাদার নাম রামকানাই রায়; লোকে তাঁকে কানাই রায় বলে ডাকত, কেউ কেউ রায়মশায়ও বলত।
ঠাকুরদাদাকে যে ছেলেরা জানত না তার একটু নমুনা দিচ্ছি। ঠানদিদির বাড়িতে এক ঝাড় তল্তা বাঁশ ছিল, ঐ বাঁশে ভাল মাছ ধরবার ছিপ হত। একবার কয়েকটি ছেলে ছিপ তৈরি করবে বলে চুপি চুপি একটি বাঁশ কেটে রাস্তায় টেনে এনেছে অমনি দেখে—রায়মশায় সম্মুখে। তারা তখনি হাত জোড় করে বললে, ‘আপনার পায়ে পড়ি, ঠানদিদিকে বলবেন না!’ তিনি ত শুনে অবাক—আরে বলিস কি? আমার বাঁশ নিয়ে পালাচ্ছিস, আর বলছিস “বলবেন না”!
ছেলেগুলি সকলে মিলে কেবলই বলতে লাগল, ‘আপনার পায়ে পড়ি, ঠানদিদিকে বলবেন না।’ তখন রায়মশায় বেগতিক দেখে বললেন, ‘তোরা বাঁশ দিয়ে কি করবি?’ ‘আজ্ঞে, ছিপ করব।’ ‘আচ্ছা, নিয়ে যা।’ তখন আবার ‘দেখবেন, ঠানদিদিকে যেন বলবেন না’ বলে ছেলেগুলো বাঁশ নিয়ে ছুট। এখন বোধ করি তোমরা বুঝতে পারছ, রায়মশাই যে ঠাকুরদাদা তা অনেক ছেলেই জানত না। ছেলেরা জানত—ঠানদিদির বাড়ি। ঠানদিদির