রাজার মেয়ে তখনি ছুটে গিয়ে তাঁর বাবাকে সব কথা বললেন। রাজা সিন্ধু পতিও এ কথা শুনে তাড়াতাড়ি সেই কুয়োর ধারে চলে এলেন। এসে সেই গাছের উপরে তৃপ্তানলকে দেখেই তিনি যারপর নাই আশ্চর্য আর খুশি হয়ে বললেন, ‘আরে তোমার নাম না তৃপ্তানল? আমাদের স্বর্গের রানী গগন-আলোর নাতির ছেলে। তুমি কেন কুয়োর ধারে বসে থাকবে বাবা? এসো এসো, ঘরে এসো!’ বলে, তাঁকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে রাজা তাঁকে সভায় নিয়ে এলেন। সভার লোক তাঁর নাম শুনেই ব্যস্ত হয়ে উঠে তাঁকে সেলাম করে জোড়হাতে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর রাজা অনেক ধুমধাম করে তাঁর সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দিলেন।
তারপর থেকে বেশ সুখেই দিন যায়। রাজা রোজই খবর নেন, তৃপ্তানল কেমন আছে, রাজার মেয়ে বলেন, ‘বেশ ভাল আছেন।’ এমন করে তিন বৎসর চলে গেল। তারপর একদিন রাজা খবর নিতে এসে শুনলেন যে, তৃপ্তানল বিছানায় শুয়ে একটা খুব লম্বা নিশ্বাস ফেলেছিলেন।
অমনি রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বাবা, তুমি কেন নিশ্বাস ফেলেছিলে? তোমার কিসের দুঃখ?’ তৃপ্তানল বললেন, ‘দাদার বঁড়শি নিয়ে মাছ ধরতে এসেছিলাম, সেই বঁড়শি মাছে নিয়ে গেছে। এতে দাদার বড্ড রাগ হয়েছে, আর বলেছেন যে, সেই বঁড়শি তাঁকে ফিরিয়ে না দিলে কিছুতেই হবে না।’ শুনে রাজা বললনে, ‘এই কথা? আচ্ছা—ডাক্ তো রে সকল মাছকে!’ রাজার হুকুমে পৃথিবীব যত মাছ সকলে এসে তাঁর কাছে হাজির হল, আর রাজা তাদের সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বলো ত, তোমাদের কার গলায় সেই বঁড়শি আটকেছিল?’ তারা সকলে বললে, ‘তাই মাছের গলায় সেই বঁড়শি আটকেছিল। আজও তার খোঁচা লাগে।’ তখন রাজামশায় তাকে বললেন, ‘হাঁ কর্ ব্যাটা, দেখি তোর গলায় কি আছে!’ এ কথায় তাই যেই ‘অ-অ-অ-আ-ক!’ করে দুহাত চওড়া হাঁটি করেছে, দেখা গেল যে ঠিক সেই বঁড়শিটি তার গলায় বিঁধে রয়েছে। অমনি চিমটা দিয়ে সেটাকে বার করে আনা হল। তখন ত আর তৃপ্তানলের আনন্দের সীমাই রইল না। রাজামশাই তাঁর হাতে সেই বঁড়শিটি দিয়ে আরো দুটি মাণিক তাঁকে দিলেন। তার একটির নাম জোয়ার মাণিক, তাকে ছুঁড়ে মারলে সমুদ্র ছুটে এসে শত্রুকে ডুবিয়ে দেয়। আর একটির নাম ভাটা-মাণিক, তাকে ছুঁড়ে মারলে সেই সমুদ্র ফিরে চলে যায়।
তারপর কুমিরের রাজাকে ডেকে সিন্ধু পতি বললেন, ‘তুমি তৃপ্তানলকে তার দেশে পৌঁছিয়ে দিয়ে এসো। দেখো যেন তার কোনো ক্ষতি না হয়।’
সেই পাহাড়ের মত কুমির তৃপ্তানলকে পিঠে করে তারঁ দেশে পৌঁছিয়ে দিয়ে এল। তারপর দীপ্তানলকে তাঁর বঁড়শি ফিরিয়ে দিতে আর বেশিক্ষণ লাগল না। কিন্তু দীপ্তানল কোথায় তার বঁড়শি পেয়ে খুশি হবেন, না তিনি আরো রেগে তলোয়ার নিয়ে তৃপ্তানলকে কাটতে গেলেন। তখন তৃপ্তানল আর কি করেন, তাড়াতাড়ি সেই জোয়ার-মাণিককে ছুঁড়ে মারলেন। মারতেই ত সমুদ্রের জল পাহাড়ের মত উঁচু হয়ে এসে দীপ্তানলকে ভাসিয়ে নিয়ে চলল। তখন আর তিনি যাবেন কোথায়? ঢকঢক জল খেতে খেতে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, ‘রক্ষে করো ভাই! আমার ঘাট হয়েছে, আমি— আর অমন করব না।’ সে কথায় তৃপ্তানল ভাটা-মাণিক ছুঁড়ে জল সরিয়ে তাঁকে বাঁচালেন।