পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৩৯

তাঁহার আশ্রমে ফেলিয়া গিয়াছে। এমন নিষ্ঠুর নীচ কাজ যাহারা করিতে পারে, সে-সকল হতভাগ্য লোকেদের সংবাদ লইয়া আমাদের কোন প্রয়োজন নাই। এমন সুন্দর শিশুর প্রতিও যাহার দয়া হয় নাই, না জানি তাহার প্রাণ কতই কঠিন!

 মুনি সেই কন্যাটিকে কোলে করিয়া ঘরে আনিলেন, এবং মায়ের মতন যত্নের সহিত তাহাকে পালন করিতে লাগিলেন। খুকিটি ক্রমে বড় হইতে লাগিল, আর দেখিতে দেখিতে তাহার আধ আধ মিষ্ট কথায় আর কোমল ব্যবহারে সকলের মন কাড়িয়া লইল। তাহার সেই সুন্দর মুখখানি দেখিলে, কেহই তাহার সহিত দুটি কথা না কহিয়া থাকিতে পারিত না, আর একটিবার তাহার সেই সুন্দর মুখের মধুমাখা কথা শুনিলে, তাহাকে ছাড়িয়া যাইতে চাহিত না। বাস্তবিক এমন সুন্দর মেয়ে কেহই কখনো দেখে নাই; এমন মিষ্ট কথাও শুনে নাই, এমন সুন্দর ব্যবহারও কেহ আর কোন বালক বা বালিকার নিকট কখনো পায় নাই। তাই মহর্ষি স্থূলকেশ মেয়েটির নাম রাখিলেন প্রমদ্বরা, অর্থাৎ সকল মেয়ের সেরা।

 মেয়েটি যখন বড় হইল, তখন একদিন মহর্ষি চ্যবনের নাতি মহাত্মা প্রমতির পুত্র রুরু সেই আশ্রমে বেড়াইতে আসিলেন। সেখানে প্রমদ্বরাকে দেখিয়াই তাঁহার মন কেমন হইয়া গেল, সেই অবধি আর তাঁহার কিছুই ভালো লাগে না। তিনি কেবলই প্রমদ্বরার কথা ভাবেন, আব যে কাজ করিতে হইবে তাহারই কথা ভুলিয়া যান।

 রুরুর বন্ধুরা প্রমতির নিকট গিয়া বিনয় করিয়া কহিল, “ভগবন্, আপনার পুত্র, স্থূলকেশের আশ্রমে প্রমদ্বরা নাম্নী একটি কন্যাকে দেখিয়া, তাহাকে বড়ই ভালোবাসিয়াছে। এখন সে খাওয়া দাওয়া ছাড়িয়া দিয়া সকল সময়ই সেই কন্যার কথা ভাবে। অতএব আপনি যাহা ভালো মনে করেন, করুন।”

 এ কথা শুনিবামাত্রই প্রমতি স্থূলকেশের নিকট গিয়া বলিলেন, “হে মহর্ষি, আমি আমার পুত্র রুরুর জন্য, আপনার প্রমদ্বরাকে চাহিতে আসিয়াছি। আপনার মত হইলে, এই দুইজনের বিবাহ হইতে পারে।”

 ইহার উওরে স্থূলকেশ অতিশয় আনন্দের সহিত বলিলেন, “আহা! মহর্ষি, আপনি কি সুন্দর প্রস্তাবই করিয়াছেন। আপনার পুত্রটি দেখিতে যেমন সুশ্রী তেমনি বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, বিনয়ে, তপস্যায়, সকলেরই বিশেষ স্নেহের পাত্র হইয়াছে। আমিও মনে করিতেছিলাম যে, ইহার সহিত আমার প্রমদ্বরার বিবাহ হইলে যৎপরোনাস্তি (যার পর নাই) সুখের বিষয় হয়।”

 তারপর দুই মুনিতে মিলিয়া হিসাব করিয়া দেখিলেন যে, আর কয়েক সপ্তাহ পরেই, ফান্ধুনী নক্ষত্রে বিবাহের অতি উত্তম দিন রহিয়াছে। সুতরাং সেই দিনেই বিবাহ স্থির করিয়া, সকলে তাহার আয়োজন করিতে লাগিলেন।

 কিন্তু হায়! মানুষেরা কত সময় কত আশা করিয়া আনন্দের আয়োজন করে, আর কোথা হইতে বিপদ আসিয়া তাহাদিগকে দুঃখের সাগরে ভাসাইয়া দেয়। একদিন প্রমদ্বরা তাঁহার সঙ্গিনীগণের সহিত মিলিয়া আশ্রমের নিকটে আমোদ প্রমোদ করিতেছিলেন; তিনি জানিতেন না যে, সেইখানেই ঘাসের ভিতরে দারুণ কেউটে সাপ ঘুমাইয়া রহিয়াছে। খেলিতে খেলিতে, সেই কেউটে সাপের উপর প্রমদ্বরার পা পড়িল, আর অমনি দুষ্ট সাপ রাগে অস্থির হইয়া