পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 আয়ার্ল্যাণ্ড দেশে ‘এলক্’ নামক একপ্রকার হরিণের হাড় পাওয়া যায়। এখন সে জন্তু জীবিত নাই। এই জন্তু যখন ছিল, তখন মানুষও নাকি ছিল; আর তাহারা তাহাকে মারিয়া খাইত, এরূপ অনেকের বিশ্বাস। এল্‌কের হাড়ে নাকি অনেক সময় সেই প্রাচীন মনুষ্যের অস্ত্রের দাগ দেখিতে পাওয়া যায়।

 সুতরাং জন্তু যে লোপ পায়, এ কথায় সন্দেহের কোন প্রয়োজন নাই। এইরূপে কত জন্তু যে লোপ পাইয়াছে, তাহা ভাবিলে আশ্চর্য হইতে হয়। অদ্যাপি যাহাঁদের চিহ্ন রহিয়াছে, তাহাদের সংখ্যাও নিতান্ত অল্প নহে। কিন্তু সকলেই তো আর চিহ্ন রাখিয়া মরিবার অবসর পায় না। একশতটির মধ্যে একটির এরূপ সৌভাগ্য হয় কি না সন্দেহ। মাংস চামড়া ইত্যাদি কোমল জিনিস তো পচিয়াই যায়। অস্থানে পড়িলে হাড়েরও সেই দশাই হয়। শরীরের মধ্যে কেবল দাঁতগুলিই যা একটু মজবুত, সেগুলি অনেকদিন থাকে। এইজন্য জন্তুর অন্যান্য অংশের চাইতে দাঁতই বেশি পাওয়া যায়। কোন কোন জন্তুর কেবল দাঁতই পাওয়া গিয়াছে, আর কিছু এখনো পাওয়া যায় নাই।

 এইরূপ সামান্য চিহ্ন দেখিয়া একটা জন্তুব পরিচয় সংগ্রহ করা কম ক্ষমতার কার্য নহে। যাহারা সমস্ত জীবন ধরিয়া খালি জস্তুর শরীর গঠন সম্বন্ধে চর্চা করেন তাহাদেরই ঐরূপ ক্ষমতা জন্মানো সম্ভব হয়। জন্তুর স্বভাবের উপযোগী করিয়া তাহাব শরীরের প্রত্যেক অংশ গঠিত হইয়াছে। সুতরাং যাহারা রীতিমত এ বিষয়ে চর্চা করিযাছেন, তাহারা সামান্য একটি হাড়ের টুকরা মাত্র দেখিয়াই অনেক সময় বলিতে পারেন যে, সেই হাড় কিরূপ জন্তুর এবং সেই জন্তুর স্বভাব কিরূপ ছিল।

 এইরূপে সেকালের জন্তুদের সম্বন্ধে অনেক কথা জানা গিয়াছে। এই সকল জস্তুর কোনটা ঠিক কতদিন পূর্বে পৃথিবীতে ছিল, তাহা বলিবার উপায় নাই, তবে মোটামুটি কোন্ জন্তুটা আগেকার, কোন্‌টা পরের, তাহা অনেক সময় সহজেই স্থির হইতে পারে। পৃথিবীর শরীরটা নানারকম মাটি এবং পাথর দিয়া গড়া। মোটামুটি এ কথা বলা যায় যে, নীচের মাটি অথবা পাথর আগেকার, উপরের মাটি অথবা পাথর পরের। যদি এরূপ দেখা যায় যে, কোন একপ্রকারের মৃত্তিকা সর্বদাই অন্য কোনপ্রকারের মুক্তিকার উপরে থাকে, নীচে কখনো থাকে না, তবে এ কথা মনে করা অসঙ্গত হয় না যে, ঐ নীচেকার মাটি উপরকার মাটির চাইতে পুরাতন। এইরূপ করিয়া নানারকম মাটি এবং পাথরের বয়স স্থির হইয়া থাকে এবং ঐ সকল মাটিতে অথবা পাথরে যে জন্তুর চিহ্ন পাওয়া যায়, তাহারও ঐরূপ বয়সই সাব্যস্ত হয়।

  এইরূপে দেখা যায় যে, শামুক, গুগলি প্রভৃতি জাতীয় জন্তু সকলের আগে জন্মিয়াছিল। মাছ, কুমির ইত্যাদি তাহার পরে। শেষে স্তন্যপায়ী*[১] জন্তু এবং তাহদের ভিতরে আবার মানুষ সকলের শেষে জন্মিয়াছে।

 আমরা একবার চুনার গিয়াছিলাম। সেখানে বেলে পাথরের পাহাড় আছে। সেই পাহাড় হইতে পাথর কাটিয়া আনিয়া লোকে ঘর-বাড়ি তয়ের করে। সে পাথর কি করিয়া কাটে, জান? কাঠ চিরিবার মতন করিয়া করাতের দ্বারা তাহা কাটা যায় না। ইহার উপায় অন্যরূপ।

 পুস্তকে যেমনভাবে পাতাগুলি থাকে, সেইসকল পাহাড়ে তেমনি করিয়া পাথরের পাত


  1. অর্থাৎ যাহারা শিশুকালে মায়ের দুধ খাইয়া জীবন ধাবণ করে। সকল জস্তুর মধ্যে এই শ্রেণীর জন্তুই শ্রেষ্ঠ। মানুষও এই শ্রেণীর জন্তু।