হইয়া আছে। আর একটু খুঁজিয়া সে দেখিতে পাইল যে, ঐ হাড়গুলি একটা মস্ত জন্তুর কঙ্কালের অংশ। তখন সে সেই স্থানের আবর্জনা পরিষ্কার করিয়া সমস্তটা কঙ্কাল বাহির করিল। তারপর মুটে ডাকিয়া পাথরসুদ্ধ সেই কঙ্কালটাকে খুঁড়িয়া তোলা হইল।
এই কঙ্কাল যে জন্তুর, সেটা ত্রিশ ফুট লম্বা ছিল। ইহার পরে এই জাতীয জন্তুর আরো কঙ্কাল পাওয়া গিযাছে; তাহার কোন কোনটা প্রায় চল্লিশ ফুট লম্বা। ইহার গঠন কোন কোন বিষয়ে মাছের মতন, কোন কোন বিষয়ে গোসাপ আর কুমিরের মতন। এইজন্য ইহার নাম ইক্থিযোসোবস্, ("ইক্থিযস্”—মাছ, “সোবস্”—কুমির গোসাপ ইত্যাদি জাতীয় জন্তু) বা ‘মাছ-কুমির’ রাখা হইয়াছে।
ইহার মেরুদণ্ডের হাড় মাছের হাড়ের মতন ছিল। মাথা কুমি্রের মতন। হাত পা নৌকার দাঁড়ের মতন অর্থাৎ খালি একটা চ্যাটালো মাংসল জিনিস, তাহাতে আঙুল নাই—অথচ তাহা মাছের ডানার মতনও নহে। তিমির ডানা ঠিক এইরূপ থাকে।
ইক্থিযোসোবস্ যে সময়ে পৃথিবীতে ছিল, তখন তাহার সমকক্ষ আর কোন জন্তু ছিল না। তাহা্র দু-ইঞ্চি লম্বা দেড়শত দুইশত ভয়ানক দাঁত দিয়া সে একটিবার যাহাকে ধরিত, তাহার আর রক্ষা ছিল না। নৌকার দাঁড়ের মতন ঐ চারিখানি পা আর ঐ লেজটির সাহায্যে সে জলের ভিতরে না জানি কিরূপ ভয়ানক বেগে ছুটিতে পারিত। পলাইয়া তাহাকে এড়াইবার ভরসা খুব কমই ছিল। তারপর তাহার চোখ দুটি। বড় একটা ইক্থিযোসোবসের চোখেব গর্ত প্রায় চৌদ্দ ইঞ্চি চওড়া হইত। এত বড় চোখ দিয়া সে আমোদের চেয়ে ঢের বেশি দেখিতে পাইত, তাহাতে সন্দেহ কি? এই চোখের গঠন আবার এমনি যে, তাহা দ্বারা ইচ্ছামত দূরবীক্ষণ অথবা অণুবীক্ষণের কাজ চলে। নিতান্ত ছোট জন্তু আর ঢের দূরের জন্তুকেও সে বেশ পরিষ্কার দেখিত।
ইহারা কখনো ডাঙায় উঠিত কি না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। ইহাদের পায়ের গঠন দেখিলে বোধ হয়, যেন তাহা দিয়া নৌকার দাঁড়ের কার্যই বেশি হইত, ওরূপ পা লইয়া ডাঙায় চলা নিতান্ত সহজ ছিল বলিয়া বোধ হয় না। তবে মাঝে মাঝে ডাঙায় উঠিয়া রোদ পোহানোটা চলিত। নিশ্বাস লইবার জন্য ইহারা কুমিরের মতন এক একবার ভাসিয়া উঠিত।
ইক্থিযোসোবসেরা হয়ত মাছই বেশি খাইত। অনেক ইক্থিযোসোবসের পেটের ভিতরে খুব ছোট ছোট ইক্থিযোসোবসের কঙ্কাল পাওয়া গিয়াছে। ইহাতে অনেকে অনুমান করেন যে, হয়ত ক্ষুধার সময় অন্য জন্তু না মিলিলে, নিজের বাচ্চাগুলিকে ধরিয়া গিলিতে তাহাদের বেশি আপত্তি ছিল না। আবার অনেকে বলেন ইক্থিযোসোবসের মৃত্যুর সময়ে তাহার পেটে যে বাচ্চা ছিল, ওগুলি তাহাদেরই কঙ্কাল। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এইরূপ কঙ্কাল কেবল এক জাতীয় ইক্থিযোসোবসের পেটের ভিতরেই দেখিতে পাওয়া যায়। ইহাতে বোধ হয়, অন্য ইক্থিযোসোবসেরা ডিম পাড়িত, আর এই জাতীয় ইক্থিযোসোবস্গুলির বাচ্চা হইত।
এরূপ প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে, যাহাতে বোধ হয় যেন ইক্থিযোসোবস্দের হঠাৎ মৃত্যু হয়, আর মৃত্যুর পরেই তাহারা মাটি চাপা পড়ে। কিরূপ ভযানক দুর্ঘটনায় এরূপ হইয়াছিল, তাহা এখন ঠিক করিয়া বলা সহজ নহে।
ইক্থিযোসোবস্ এই সময়ের জন্তুদের মধ্যে সকলের চাইতে ভয়ানক ছিল বটে, কিন্তু