খেত। এখন ক্ষেতের সংখ্যা বেশি হয়েছে, এ-সব পাখিও দেশময় ছড়িয়ে পড়েছে, তাই এখন আর এক-একটা ক্ষেতের উপরে তত বেশি টিয়া দেখা যায় না। আগে যখন ক্ষেতের সংখ্যা অল্প ছিল, তখন এক-এক ক্ষেতে ত্রিশ চল্লিশ হাজার করে টিয়া এসে পড়ত।
টিয়ার ঠোঁট দেখেছ, কি চমৎকার! টিয়া তার ঠোঁট দিয়ে যেমন সহজে আর পরিষ্কার করে শস্যের খোসা ছাড়িয়ে শাঁসটুকু খায় আর কোনো পাখি তেমন পারে না। জিবখানি ঠিক যেন মানুষের জিবের মতো। অনেকে বলেন যে এইজন্যেই টিয়া এমন পরিষ্কার কথা বলতে পারে।
আমার একটি টিয়া ছিল, সে এমন সুন্দর কথা কইত যে, তেমন সুন্দর কথা আর আমি কোনো পাখিকে বলতে দেখি নি। কেউ তার সামনে আছাড় খেলে সে “হিঃ হিঃ হিঃ হিঃ” করে হাসত। কুকুর দেখলে তাকে ‘আ তু!’ বলে ডাকত। যে-সব লম্বা কথা সে আওড়াত, তার মধ্যে দুটি হচ্ছে এই—
কৃষ্ণ কথা! কৃষ্ণ কথা!
কৃষ্ণ কথা কওরে প্রাণ,
কৃষ্ণ ভজিলে পরিত্রাণ।
“চক্রধর কৃষ্ণ জগত করতা
ত্বরিতে তরাও কৃষ্ণ তুমি সে ভরসা।”
এই পাখিটি আমাকে বড্ড ভালোবাসত। আমি তার দাঁড়ের কাছে মুখ নিলেই সে খুব মিষ্টি সরু সুরে “উ—!” বলে, তার ঠোঁটটি এনে আমার নাকে ঠেকিয়ে রাখত।
এ হচ্ছে টিয়ার চুমো খাওয়া। অনেক টিয়াই এমনি করে থাকে। একবার এই কথা নিয়ে ভারি মজা হয়েছিল।
এক সাহেবের টিয়া চুরি যায়, আর তাই নিয়ে কাছারিতে মোকদ্দমা হয়। টিয়াটি পুলিসের লোকে কাছারিতে এনে হাজির করেছে, এখন সেটি যে সেই সাহেবের, সে কথা প্রমাণ করতে হবে। সাহেব খাঁচার কাছে মুখ নিয়ে গেলেন, অমনি পাখিটি তাড়াতাড়ি এসে আদরের সহিত তাঁকে চুমো খেল। তাতে একটা ছেকরা বলল যে, যে খাঁচার কাছে মুখ নেবে তাকেই পাখি চুমো খাবে। এ কথা প্রমাণ করে দেবার জন্য সে খাঁচার কাছে গিয়ে বলল, “আমাকে একটা চুমো খাতো।” অমনি মাথা ফুলিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে তার ঠোঁট এমনি কামড়ে ধরল যে ঠোঁটসুদ্ধ ছিঁড়ে নেবার গতিক! সে ছোকরা যতই ভ্যাঁ ভ্যা করে চ্যাঁচায়, টিয়া ততই আরো বেশি করে ঠোঁট বসিয়ে দেয়! অনেক কষ্টে শেষে তাকে ছাড়ানো হয়েছিল।
তারপর গোলমাল থেমে গেলে সেই সাহেব টিয়াটাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কুকুর কি বলে?” টিয়া বলল, “ভৌ, ভৌ, ভৌ!” বিড়াল কি বলে? “মিউ মিউ মিউ!”
এক দোকানীর একটা টিয়া দুটি কাজ জান্ত। সে শিস দিতে পারত, আর বলতে পারত “ভাগ, বেটা!" একদিন পাখিটা খাঁচায় বসে শিস্ দিচ্ছিল, তাই শুনে একটা কুকুর ভাবল বুঝি তার মুনিব তাকে ডাকছে। এই ভেবে বেচারা যেই ছুটে খাঁচার কাছে এসেছে, অমনি পাখিটা চেঁচিয়ে বলে উঠল, “ভাগ্ বেটা!" তা শুনে কুকুর থতমত খেয়ে তখনি লেজ গুটিয়ে পৃষ্ঠভঙ্গ দিল।