পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৬৯

গিলিতে থাকে। একটা বোরা সাপ এমনি করিয়া দেড় ঘণ্টার মধ্যে একমণ ছয় সের ওজনের একটা ছাগলকে গিলিয়া ফেলিয়াছিল।

 একবার একটা জন্তুকে গিলিতে আরম্ভ করিলে নাকি সাপের আর থামিবার শক্তি থাকে না। জন্তুটাকে গিলিয়া শেষ করিতে হয়।

 সাপের ছাগল গেলার সম্বন্ধে একটা মজার গল্প আছে। কাফ্রীরা একটা দেওয়ালে ছিদ্র করিয়া তাহার দুপাশে দুটা ছাগল বাঁধিয়া রাখিল। বোরা সাপ আসিয়া দেখিল ফলার প্রস্তুত এখন পাতে বসিলেই হয়!

 সে আগে একটি ছাগলকে গিলিল, তারপর দেওয়ালের ছিদ্র দিয়া গলা বাড়াইয়া আর একটিকেও খাইল, তাতে মজা হইল এই যে, দেওয়ালের দুপাশে দুই ছাগল সাপের গায়ে দুই প্রকাণ্ড পুঁটুলির মতো হইয়া আছে, সে পুঁটুলি আর দেওয়ালের ছিদ্র দিয়া গলিতে চাহে না, কাজেই সাপ মহাশয় ছাগুলে গেরোয় বাঁধা পড়িলেন! এমনটি যে হইবে, তাহা জানিয়াই কাফ্রীরা দুটা ছাগল খরচ করিয়াছিল, আর আগে থাকিতেই সাপ মহাশয়ের জন্য বড় বড় মুগুরের জোগাড় করিয়া রাখিয়াছিল। তারপরে যেই তাহারা দেখিল যে তাঁহার ভোজন শেষ হইয়াছে, এখন আঁচাইবার সময়, অমনি—বুঝিতেই পার।

 একটা খাঁচার ভিতরে একটা প্রকাণ্ড বাঘ ছিল, আর সেই খাঁচার পাশে একটা বোরা সাপ ছিল। ইহার মধ্যে কেমন করিয়া সাপটা আসিয়া বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়াছে। বাঘ বোধহয় ইহার পূর্বে আর এমন অদ্ভুত জন্তু দেখে নাই, তাই সে ভারি আশ্চর্য হইয়া তাহার তামাশা দেখিতে লাগিল; সে মনে করে নাই যে উহার পেটে কোনো দুরভিসন্ধি আছে। এমন সময় সাপটা হঠাৎ তাহাকে জড়াইয়া ফেলিল। বাঘের তখন বিপদের আর সীমা নাই। গলায় বুকে আর সামনের দুপায়ে বাঁধন পড়িয়াছে, দুখানি পাঁজর ভাঙ্গিয়া গিয়াছে যুদ্ধ করিবার বড়-বড় হাতিয়ার গুলি সবই আটকা, বেচারা এখন কি দিয়া প্রাণ বাঁচায়? যাহা হউক, তাহার পিছনের পা দুখানি খোলা ছিল; তাই দিয়া সে প্রাণপণে সাপের গায়ে আঁচড়াইতে লাগিল। হাজার হোক বাঘের আঁচড়। সে আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত হইয়া দেখিতে দেখিতে সাপ মরিয়া গেল।

 বোরা সাপ যেমন বাঘের হাতে জব্দ হইয়াছিল, ছোট-ছোট সাপ (বিশেষত ঢোড়া সাপ) অনেক সময়—তেমনি কই মাছের কাছে জব্দ হয়। কই মাছের কাঁটা বড়ই ভয়ংকর! তাহাকে গিলিতে গেলে সেই কাঁটা গলায় আটকাইয়া যায়। তখন আর সাপের বাছা গিলিতেও পারেন না, ফেলিতেও পারেন না। কেবল ওয়াক্‌ তোলাই সার হয়, আর সেই অবস্থায় তাঁর প্রাণটি বাহির হইয়া যায়।


তিমি শিকার

 মেরুর নিকটে যে-সকল সাগর আছে, তাহাতে বিস্তর তিমি থাকে। তিমির তেলে বাতি জ্বলে, কাজেই সেটা ভারি দরকারি জিনিস। এই তেলের ব্যবসায়ে বৎসরে প্রায় এক কোটি টাকা লাভ হয়, সেই টাকার লোভে ঢের লোক জাহাজে করিয়া তিমি শিকার করিতে যায়।