তাদের দেশে পৌঁছাবে, পথ ভুলে যাবে না।
তাদের দেশ কিরকম জান? সে আর কিছু নয়, খোলা সমুদ্রের ধারে খানিকটা খালি জায়গা, সেখানে অনেক নুড়ি পাথর, আর ছোট বড় অনেক টিপি আছে, কিন্তু বরফ বেশি নাই। সেখানে বড্ড হাওয়া, তাতে বরফ উড়িয়ে নিয়ে যায়।
এই হল তাদের দেশ। তোমার আমার কাছে যেমনই লাগুক, ওদের কাছে ঐ ভালো। এইখানে তাদের জন্ম হয়েছিল;তাদের খোকাকুকিরা সকলেই এইখানে হয়েছে। বছর বছরই তারা লাখে লাখে এইখানে আসে কত যুগ যুগান্তর ধরে এমনি চলেছে, তার ঠিকানা নাই।
দেশে পৌঁছেই গিন্নীরা সকলেই একেকটি ছোট্ট ঢিপি খুঁজে বার করে, তার উপর একটি ছোট্ট গর্ত খুঁড়ে নিয়ে, তাতে খুব গম্ভীর হয়ে বসবে। আরেক বাড়ির গিন্নী যদি এর খুব কাছে আরেকটা ঢিপিতে এসে বাসা নেয়, তবে এ ওর হাওয়া আটকাচ্ছে বলে দুজনায় বিষম বচসা লেগে যাবে, আর নিজের বাসা না ছেড়ে ঠোকরাবার সুবিধা পেলে তাতেও কসুর হবে না।
এদিকে বাড়ির যে কর্তা, সে বেচারা এখনো বাড়িতে ঢুকতেই পায় নি। চার-পাঁচজনে সকলেই বলছে, “আমি কর্তা! আমি কর্তা!” এখন এর মধ্যে কার কথা ঠিক, তাই নিয়ে ঘোরতর যুদ্ধ বেধে গেছে। পেঙ্গুইনেরা ভারি ভদ্রলোক, তারা ঠোকরাঠুকরি করাকে অসভ্যতা মনে করে। যুদ্ধের সময় তারা শক্রকে কাঁধ দিয়ে ঠেলে বার করে দিতে চেষ্টা করে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে আর-এক হাতে ধাঁই ধাঁই থাপ্পড় লাগায়।
এমনি করেই সকল শক্রকে তাড়াতে পারলেই যে কর্তার সব আপদ চুকে যায়, তা নয়। গিন্নী যেই দেখে যে কর্তার জয় হয়েছে, অমনি সে এসে তাকে প্রাণপণে ঠোকরাতে থাকে।
কর্তা খুব বীরপুরুষ হলেও, গিনীর ঠোকরগুলি সে নিতান্ত ভালো মানুষের মতো চোখ বুজে শুয়ে হজম করে। সে বেশ বুঝতে পারে যে এতদিন তার একটি মনিব জুটেছে, এখন থেকে এর হুকুম মেনে চলতে হবে।
এরপর কর্তা খুঁজে খুঁজে নুড়ি আনবে, গিন্নীর ঢিপির উপর বসে তাই দিয়ে বাসা বানাবে। কর্তাদের মধ্যে আবার দু-একজন চোরও আছেন, তাঁরা পরিশ্রম করে নুড়ি কুড়ানোর চেয়ে, অন্যের বাসা থেকে না বলে নিয়ে আসতে খুব মজবুত! ধরা পড়লে এঁদের সাজাটাও হয় তেমনি।
বাসা তয়ের হলে গিন্নী তাতে একটি কি দুটি ডিম পেড়ে দিনরাত উপোস থেকে তাতে তা দিতে আরম্ভ করে। কর্তা ততক্ষণ সমুদ্রে গিয়ে দিন পনেরো খুব খেয়েদেয়ে নেয়। তারপর সে নিজে এসে ডিমের উপর বসে গিন্নীকে ছুটি দেয়। গিন্নীও তখন সমুদ্রে গিয়ে দিনকতক স্নানাহারে কাটায়।
ছানা হলে দুজনায় মিলে তাদের খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত হয়, আর প্রাণপণ তাদের বিপদ আপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। বিপদ সেখানে অনেক আছে। পাড়ায় গুণ্ডার অভাব নাই। তারা বাড়ি ঘরের ধার ধারে না, খালি অন্যের বাসা ভেঙ্গে আর ছানা মেরে বেড়ায়। তাছাড়া একরকম পাখি আছে, তারা সুবিধা পেলেই এসে ডিম খেয়ে যায়। সমুদ্রে নানারকম জানোয়ার থাকে, তারা অনেক সময় ধাড়ী পাখিগুলোকে মেরে ফেলে, তখন ছানাগুলির বড়ই বিপদ হয়।
উপেন্দ্র—১১০