পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৯৯

 ইহার পর হইতে এ পর্যন্ত জ্যোতিষশাস্ত্রর অনেক উন্নতি হইয়াছে, আর খুব ভাল ভাল দূরবীক্ষণ প্রস্তুত হইয়াছে। এই সকলের সাহায্যে এখন হামেশাই ছোট বড় বিস্তর ধূমকেতু দেখিতে পাওয়া যায়। চক্ষে ইহার সবগুলি দেখিতে পাওয়া যায় না, তাই আমরা বুঝিতে পারি না, যে ধূমকেতু এমন সচরাচর দেখা সম্ভব। এখন আর পুরাতন পুঁথি খুঁজিয়া ধূমকেতু উঠিবার সময় স্থির করিতে হয় না। দিনকতক একটা ধূমকেতুকে দেখিলেই এখন জ্যোতির্বিদরা তাহার নাড়ী-নক্ষত্র সমস্ত বলিয়া দিতে পারেন। সে কোন্‌ পথে চলে, কয় দিনে ফিরিয়া আইসে, ঘণ্টায় ক’মাইল যায়—ইত্যাদি সকল কথাই এখন স্থির করা যায়।

 এমন ধূমকেতু আছে, যে তাহা সওয়া তিন বৎসর পর পর একবার ফিরিয়া আইসে। আবার এক লক্ষ বৎসর পরে একবার আইসে এমন ধূমকেতুও আছে। আবার ধূমকেতুর পথ বাহির করিতে গিয়া এমন ধূমকেতুও পাওয়া গিয়াছে, যে তাহারা আর কদাপি ফিরিয়া আসিবে না।

 ধূমকেতুগুলি এত বড় বলিয়া তাহাদিগকে দেখিলে সহজে বিশ্বাস হয় না, যে তাহারা এত হাল্কা। আগেকার লোকেরা অনেক সময় এই মনে করিয়া ভয় পাইত, যে এই ধূমকেতু গুলির যখন এত বুনো মেজাজ, তখন একটা পাগলা ধূমকেতু যদি ছুটিয়া আসিয়া পৃথিবীকে ঢুঁ মারে, তবে কি ভয়ানক কাণ্ডই হয়। কিন্তু এরূপ হাল্‌কা জিনিসের দ্বারা পৃথিবীর কোন অনিষ্ট হওয়ার বিশেষ আশঙ্কা দেখা যায় না। ১৮৬১ সালে একটা অতি প্রকাণ্ড ধূমকেতু উঠিয়াছিল। অনেকে বলেন, যে সেই সময়ে পৃথিবী সেই ধূমকেতুর লেজের ভিতর দিয়া চলিয়া আসিয়াছে, কিন্তু তাহাতে কাহারও বিশেষ কিছু হয় নাই। আর একবার একটা ধূমকেতু বৃহস্পতিকে ঘেঁসিয়া গিয়াছিল; কিন্তু তাহাতে বৃহস্পতির কিছুই হয় নাই। বৃহস্পতির কিছু হয় নাই বটে; কিন্তু ধূমকেতু বেচারা কেমন থতমত খাইয়া পথ ভুলিয়া গেল। চুম্বক যেমন লোহাকে টানে, জগতের সকল জিনিসই সেইরূপ পরস্পরকে টানে। পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি সকলেই পরস্পরকে টানে। ধূমকেতু বৃহস্পতির কাছ দিয়া যাইবার সময় বৃহস্পতিও তাহাকে ঐরূপ টানিয়াছিল। ধূমকেতুগুলি সূর্যের কাছে আসিয়া ভয়ানক গোঁ করিয়া ছুটে। এই গোঁ করিয়া ছুটয়াছিল বলিয়াই সে যাত্রা সেই ধূমকেতু বৃহস্পতির হাত এড়াইয়া গেল— কিন্তু সেই টানাটানিতে আর তাহার পথ ঠিক রহিল না। আগে এই ধূমকেতু ৫/ বৎসর অন্তর এক-একবার আসিত। কিন্তু ১৭৭৯ খ্রীষ্টাব্দে বৃহস্পতির কাছে তাড়া খাইয়া সেই যে সে পলাইয়াছে, এ পর্যন্ত আর ফিরে নাই।

 আমি বলিতেছিলাম, যে ধূমকেতু সূর্যের কাছে আসিলে খুব ছুটে। বাস্তবিক ইহার চরিত্র অতি অদ্ভুত। সূর্যের নিকটে আসিলেই ইহার মাথায় গোল লাগিয়া যায়। তখন ইহাকে দেখিলে মনে হয়, যেন কুকুরের সামনে বিড়াল পড়িয়াছে। দূরে থাকিতে ধীরে ধীরে চলিয়াছিল—এত ধীরে ধীরে, যে ইচ্ছা করিলে আমরাও তেমনি ছুটিতে পারি। তখন তাহার তেমন ভয়ানক লেজও ছিল না; দূরবীন দিয়া তাহাকে একটা ঝাপ্‌সা তুলার ডেলার মতন দেখা যাইত। ক্রমে যতই সূর্যের কাছে আসিতে লাগিল ততই উজ্জ্বল আর গরম হইতে লাগিল। এত উজ্জ্বল, যে অনেক সময় দুপুরবেলায় সূর্যের কাছেও তাহাকে দেখা যায়। ক্রমে লেজটি দেখা দিল, আর সেই লেজটিকে অতি সাবধানে সূর্যের দিক হইতে ফিরাইয়া রাখিতে লাগিল। বেগ প্রায় লক্ষগুণ বাড়িয়া গেল। আবার সূর্যের নিকট হইতে চলিয়া