পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রেতভূমে।
১৫৭

মাংশভুক্ পশু সকল ফিরিতেছিল; মনুষ্য দুই জনের আগমনে উচ্চকণ্ঠে রব করিতে লাগিল, কেহ আক্রমণ করিতে আসিল, কেহ বা পদশব্দ করিয়া চলিয়া গেল। কপালকুণ্ডলা দেখিলেন নবকুমারের হস্ত কাঁপিতেছে; কপালকুণ্ডলা স্বয়ং নির্ভীত, নিষ্কম্প।

 কপালকুণ্ডলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “স্বামিন্! ভয় পাইতেছ?”

 নবকুমারের মদিরার মোহ ক্রমে শক্তিহীন হইয়া আসিতেছিল। অতি গম্ভীর স্বরে নবকুমার উত্তর করিলেন,

 “ভয়ে, মৃণ্ময়ি? তাহা নহে।”

 কপালকুণ্ডলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “তবে কাঁপিতেছ কেন?”

 এই প্রশ্ন কপালকুণ্ডলা যে স্বরে করিলেন, তাহা কেবল রমণীকণ্ঠেই সম্ভবে। যখন রমণী পরদুঃখে গলিয়া যায় কেবল তখনই রমণীকণ্ঠে সে স্বর সম্ভবে। কে জানিত যে আসন্ন কালে শ্মশানে আসিয়া কপালকুণ্ডলার কণ্ঠ হইতে এ স্বর নির্গত হইবে?

 নবকুমার কহিলেন, “ভয় নহে। কাঁদিতে পারিতেছি না, এই ক্রোধে কাঁপিতেছি।”

 কপালকুণ্ডলা জিজ্ঞাসিলেন “কাঁদিবে কেন?”

 আবার সেই কণ্ঠ!

 নবকুমার কহিলেন, “কাঁদিব কেন? তুমি কি জানিবে মৃণ্ময়ি! তুমিত কখন রূপ দেখিয়া উন্নত হও নাই—”

১২