পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কন্‌গ্রেস

শ্রীযুক্ত অমিয়চন্দ্র চক্রবর্তী কল্যাণীয়েষু

অত্যন্ত উদ্‌বেগ নিয়ে তোমাকে চিঠি লিখতে বসেছি।

 কিছুকাল আগেই দেশের মন ছিল মরুময়। দিগন্তব্যাপী অনুর্বরতা তার ভিন্ন ভিন্ন অংশের মধ্যে পণ্যবিনিময়ের সম্বন্ধ অবরুদ্ধ করে বহু যুগকে দরিদ্র করে রেখেছিল।

 এমন সময় আশ্চর্য অল্প কালেই বৃহৎ শূন্যতার মাঝখানে কন্‌গ্রেস মাথা তুলে উঠল দূর ভবিষ্যতের অভিমুখে মুক্তির প্রত্যাশা বহন করে, বহুশাখায়িত বিপুল বনস্পতির মতো। বিরাট জনসাধারণের মন আশ্চর্য দ্রুত বেগে বদলে গেল; সেই মন আশা করতে শিখল, ভয় করতে ভুলে গেল, বন্ধনমোচনের সংকল্প করতে তার সংকোচ আর রইল না।

 কিছুদিন আগেই দেশ যা অসাধ্য বলেই হাল ছেড়ে বসে ছিল এখন তা আর অসম্ভব বলে মনে হল না। ইচ্ছা করবার দৈন্য আজ ঘুচেছে। এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত দেশের এত বড়ো পরিবর্তন ঘটতে পেরেছে কেবল একজন মাত্র মানুষের অবিচলিত ভরসার জোরে, সেই ইতিহাসের বিস্ময়কর হয়তো ক্ষণে ক্ষণে স্থানে স্থানে অস্বীকৃত হতেও পারবে এমনতরো অকৃতজ্ঞতার আশঙ্কা মনে জাগছে।

 সফল ভবিতব্যতার আশ্বাস নিয়ে আজ যে কন্‌গ্রেস অসামান্য ব্যক্তি-স্বরূপের প্রতিভার উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কালে কালে তার সংস্কার-সাধনের, তার সীমাপরিবর্ধনের প্রয়োজন নিশ্চয় ঘটবে তা জানি। কিন্তু চঞ্চল হয়ে বর্তমানের সঙ্গে হঠাৎ তার সামঞ্জস্যে আঘাত করে একটা নাড়াচাড়া ঘটাতে গেলে মন্দিরের ভিত হবে বিদীর্ণ। প্রাণবান সৃষ্টির ধারাকে বাঁচিয়ে রেখেও বড়ো-রকম বিপর্যয় সাধন করবার যোগ্য অসামান্য