পাতা:কাহাকে?.djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
কাহাকে?

আপন হইতে টুটিয়া খসিয়া পড়িত। গানটির কি যে মোহ ছিল জানি না, শুনিতে শুনিতে বাল্যের স্মৃতিধারা পূর্ণপ্রবাহে উথলিয়া কুমারী-হৃদয়ের সুপ্ত অতৃপ্ত প্রেমাকাঙখাকে স্ফীত উচ্ছসিত করিয়া তুলিত। সঙ্গীতধ্বনি সুরে তানে উঠিয়া গড়িয়া যতই মধুরতা বর্ষণ করিত—ততই সে আকাঙখা তীব্র আকুলতর হইয়া প্রবল দ্রুতোচ্ছাসে তাহার চির-পরিচিত অথচ চিরনূতন কে জানে কোন অজানা প্রেমময় সাগর-দেবতার অন্বেষণে ধাবিত হইত,—তাহাতে আত্ম-বিলীন করিতে চাহিত। এই সুমধুর সুকোমল তীব্র অতৃপ্তির আতিশধ্যে ক্রমশ: যেন আপন হারাইয়া ফেলিতাম; সেই অপরিচিত মধুর গীত-সন্তাষণে মুগ্ধ স্মৃতিদ্বার উদঘাটিত করিয়া গায়ক ক্রমে আমার মনে নয়নে পরিচিত প্রিয়জনের মূর্ত্তিতে বিভাসিত হইয়া উঠিতেন; নূতনে পুরাতনে, অতীতে বর্ত্তমানে, স্মৃতি বাসনায় তখন একাকার হইয়া পড়িত—আমি জাগিয়া যেন স্বপ্ন-রাজ্যে বিচরণ করিতাম।

 তিনি চলিয়া যাইবার পরেও সমস্ত রাত্রি ধরিয়া কেমন মেঘাচ্ছন্ন থাকিতাম,—স্বপ্নে জাগরণে ঐ একইরূপ ভাব আমাকে অভিভূত করিয়া রাখিত; পরদিন নিদ্রা ভঙ্গের পর হইতে সে ভাব অল্পে অল্পে দূর হইয়া যাইত। তিন চারি দিন পরে, কখনও সপ্তাহ পরে আবার তিনি যখন আসিতেন, তখন আমি সম্পূর্ণ প্রকৃতিস্থ-তখন আর সে ভাবের চিহ্ণমাত্র নাই; তখন তাই তাঁহাকে দেখিলে পূর্ব্ব ভাবের স্মৃতিতে এমন লজ্জাবোধ হইত! কিন্তু আবার গান আরম্ভ করিলেই যেকে সেহ! এ কি অপরূপ রহস্য জানি না; সুর্য্যের উদয়াস্তে পৃথিবী যেমন দ্বিমূর্ত্তি ধারণ