আমিন হাসিয়া মিনতি করিয়া বলিল, “তোর দুটি পায়ে পড়ি, বোন। ওকে আর তুই কিছু বলিস না।”
এমন করিয়া বলিল, যেন ওই যুবকটি আমিনার একটি বড়ো সাধের পোষা হরিণ, এখনো তাহার বন্য স্বভাব দূর হয় নাই— পাছে অন্য কোনো মানুষ দেখিলে ভয় পাইয়া নিরুদেশ হয়, এমন আশঙ্কা আছে।
এমন সময় ধীবর আসিয়া কহিল, “আজ দালিয়া আসে নাই, তিন্নি?”
“আসিয়াছে।”
“কোথায় গেল।”
“সে বড়ো উপদ্রব করিতেছিল, তাই তাহাকে ওই ঘরে পুরিয়া রাখিয়াছি।”
বৃদ্ধ কিছু চিন্তান্বিত হইয়া কহিল, “যদি বিরক্ত করে সহিয়া থাকিস। অল্প বয়সে অমন সকলেই দুরন্ত হইয়া থাকে। বেশি শাসন করিস না। দালিয়া কাল এক থলু দিয়া আমার কাছে তিনটি মাছ লইয়াছিল।” (থলু অর্থে স্বর্ণমুদ্রা।)
আমিনা কহিল, “ভাবনা নাই বুঢ়া, আজ আমি তাহার কাছে দুই থলু আদায় করিয়া দিব, একটিও মাছ দিতে হইবে না।”
বৃদ্ধ তাহার পালিত কন্যার এত অল্প বয়সে এমন চাতুরী এবং বিষয়বুদ্ধি দেখিয়া পরম প্রীত হইয়া তাহার মাথায় সস্নেহে হাত বুলাইয়া চলিয়া গেল।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
আশ্চর্য এই, দালিয়ার আসাযাওয়া সম্বন্ধে জুলিখার ক্রমে আর আপত্তি রহিল না। ভাবিয়া দেখিলে ইহাতে আশ্চর্য নাই। কারণ, নদীর যেমন এক দিকে স্রোত এবং আর-এক দিকে কুল, রমণীর সেইরূপ হৃদয়াবেগ এবং লোকলজ্জা। কিন্তু, সভ্যসমাজের বাহিরে আরাকানের প্রান্তে এখানে লোক কোথায়।
এখানে কেবল ঋতুপর্যায়ে তরু মুঞ্জরিত হইতেছে এবং সম্মুখে নীলা নদী বর্ষায় স্ফীত, শরতে স্বচ্ছ এবং গ্রীষ্মে ক্ষীণ হইতেছে, পাখির উচ্ছ্বসিত কণ্ঠস্বরে