পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8이O গল্পগুচ্ছ চার। আর আমার হাতে বঝি মারের অস্ত্র নেই ? সেইরাপ কথা হইল। দই সম্পাদক, দই লেখক এবং দই পাঠকে মিলিয়া কমিটি বসিল । অমল কহিল, কাগজের নাম দেওয়া যাক চারপাঠ । চার কহিল, "না, এর নাম অমলা ৷” এই নতন বন্দোবস্তে চার মাঝের কয়দিনের দুঃখবিরক্তি ভুলিয়া গেল। তাহাদের মাসিক পত্রটিতে তো মন্দার প্রবেশ করিবার কোনো পথ নাই এবং বাহিরের লোকেরও প্রবেশের বার রন্ধ । সপ্তম পরিচ্ছেদ ভূপতি একদিন আসিয়া কহিল, “চার, তুমি যে লেখিকা হয়ে উঠবে, পাবে এমন তো কোনো কথা ছিল না!” চার চমকিয়া লাল হইয়া উঠিয়া কহিল, “আমি লেখিকা! কে বললে তোমাকে। কখখনো না।” ভূপতি। বামালসন্ধ গ্রেফতার। প্রমাণ হাতে হাতে!—বলিয়া ভূপতি একখণ্ড সরোরাহ বাহির করিল। চার দেখিল, যে-সকল লেখা সে তাহদের গনপত সম্পত্তি মনে করিয়া নিজেদের হস্তলিখিত মাসিক পত্রে সঞ্চয় করিয়া রাখিতেছিল তাহাই লেখক-লেখিকার নামসমৃদ্ধ সরোরাহে প্রকাশ হইয়াছে। কে যেন তাহাব খাঁচার বড়ো সাধের পোষা পাখিগুলিকে বার খলিয়া উড়াইয়া দিয়াছে, এমনি তাহার মনে হইল। ভূপতির নিকটে ধরা পড়িবার লন্জা ভুলিয়া গিয়া বিশ্বাসঘাতী অমলের উপর তাহার মনে মনে অত্যন্ত রাগ হইতে লাগিল । “আর এইটে দেখো দেখি !" বলিয়া বিশ্ববন্ধ খবরের কাগজ খলিয়া ভূপতি চারুর সম্মুখে ধরিল। তাহাতে ‘হাল বাংলা লেখার ঢঙ বলিয়া একটা প্রবন্ধ বাহির হইয়াছে। চার হাত দিয়া ঠেলিয়া দিয়া কহিল, "এ পড়ে আমি কী করব।” তখন অমলের উপর অভিমানে আর কোনো দিকে সে মন দিতে পারিতেছিল না। ভূপতি জোর করিয়া কহিল, “একবার পড়ে দেখোই-না ।” চার অগত্যা চোখ বদলাইয়া গেল। আধুনিক কোনো কোনো লেখকশ্রেণীর ভাবাড়বেরে-পাণ গদ্য লেখাকে গালি দিয়া লেখক খুব কড়া প্রবন্ধ লিখিয়াছে। তাহার মধ্যে অমল এবং মন্মথ দত্তর লেখার ধারাকে সমালোচক তীব্ৰ উপহাস করিয়াছে, এবং তাহারই সঙ্গে তুলনা করিয়া নবীনা লেখিকা শ্ৰীমতী চারবালার ভাষার অকৃত্রিম সরলতা অনায়াস সরসতা এবং চিত্ররচনানৈপণ্যের বহল প্রশংসা করিয়াছে। লিখিয়াছে, এইরুপ রচনাপ্রণালীর অনুকরণ করিয়া সফলতা লাভ করিলে তবেই অমল-কোম্পানির নিস্তার, নচেৎ তাহারা সম্পণে ফেল করিবে ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। ভূপতি হাসিয়া কহিল, “একেই বলে গরমারা বিদ্যে।” চার তাহার লেখার এই প্রথম প্রশংসায় এক-একবার খুশি হইতে গিয়া তৎক্ষণাং পীড়িত হইতে লাগিল। তাহার মন যেন কোনোমতেই খুশি হইতে চাহিল না। প্রশংসার লোভনীয় সাধাপাত্র মুখের কাছ পৰ্যন্ত আসিতেই ঠেলিয়া ফেলিয়া দিতে