পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

688 গল্পগুচ্ছ সকুমারী। এ কিরকম বিশ্রী ঠাট্রা। ছি ছি, সকলই অনাসষ্টি! দেখো দেখি। আমার বকে এখনো ধড়াস-ধড়াস করছে। সতীশ মদ ধরেছে বুঝি ! সতীশ । পালাও— তোমার ছেলেকে নিয়ে এখনই পালাও । নইলে তোমাদের রক্ষা নেই। হরেনকে লইয়া হস্তপদে সকুমারীর পলায়ন শশধর। সতীশ, আমন উতলা হোয়ো না। ব্যাপারটা কী বলো। হরেনকে কার হাত হতে রক্ষা করবার জন্য ডেকেছিলে । সতীশ । আমার হাত হতে । (পিস্তল দেখাইয়া) এই দেখো, মেসোমশায় । দ্রতপদে বিধমখীর প্রবেশ বিধ। সতীশ, তুই কোথায় কী সবনাশ করে এসেছিস বল দেখি। আপিসের সাহেব পলিশ সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়িতে খানাতল্লাসি করতে এসেছে। যদি পালাতে হয় তো এইবেলা পালা। হায় ভগবান ! আমি তো কোনো পাপ করি নি, আমারই আদস্টে এত দুঃখ ঘটে কেন । সতীশ । ভয় নেই— পালাবার উপায় আমার হাতেই আছে। শশধর। তবে কি তুমি— সতীশ । তাই বটে মেসোমশায়—যা সন্দেহ করছ তাই। আমি চুরি করে মাসির ঋণ শোধ করেছি। আমি চোর। মা, শুনে খুশি হবে, আমি চোর, আমি খুনী ! এখন আর কাঁদতে হবে না— যাও যাও, আমার সম্মুখ হতে যাও । আমার অসহ্য বোধ হচ্ছে। শশধর । সতীশ, তুমি আমার কাছেও তো কিছু ঋণী আছ, তাই শোধ করে যাও । সতীশ । বলো, কেমন করে শোধ করব। কী আমি দিতে পারি। কী চাও তুমি । শশধর । ওই পিস্তলটা দাও । সতীশ । এই দিলাম। আমি জেলেই যাব । না গেলে আমার পাপের ঋণশোধ হবে না। শশধর। পাপের ঋণ শাসিতর বারা শোধ হয় না সতীশ, কমে'র বারাই শোধ হয়। তুমি নিশ্চয় জেনো, আমি অনুরোধ করলে তোমার লড়োসাহেব তোমাকে জেলে দেবেন না। এখন হতে জীবনকে সাথক করে বেচে থাকো । সতীশ । মেসোমশায়, এখন আমার পক্ষে বাঁচা যে কত কঠিন তা তুমি জান না – মরব নিশ্চয় জেনে পায়ের তলা হতে আমার শেষ সখের অবলম্বনটা আমি পদাঘাতে ফেলে দিয়ে এসেছি— এখন কী নিয়ে বাঁচব। শশধর । তব বাঁচতে হবে, আমার ঋণের এই শোধ,– আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালাতে পারবে না । সতীশ । তবে তাই হবে। শশধর। আমার একটা অনুরোধ শোনো। তোমার মাকে আর মাসিকে অন্তরের সহিত ক্ষমা করো। সতীশ । তুমি যদি আমাকে ক্ষমা করতে পার, তবে এ সংসারে কে এমন থাকতে পারে যাকে আমি ক্ষমা করতে না পারি। প্রণাম করিয়া মা, আশীবাদ করো আমি সব যেন সহ্য করতে পারি-- আমার সকল দোষগণ