বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটি সাদা গল্প SR পাক, একেবারে নীচে তলিয়ে যেতেন। তীর ঘাড়ে কেউ কোন কাজ পিয়ে দিলে এবং তা করবার বাঁধার্বাধি পদ্ধতি দেখিয়ে দিলে, শ্যামলাল সে কাজ পুরোপুরি এবং আগাগােড়া নিখুঁৎ ভাবে করতে পারতেন। কিন্তু নিজের চেষ্টায় জীবনে নিজের পথ কেটে বেরিয়ে যাবার সাহস কি শক্তি তার শরীরে লেশমাত্র ছিল না। পৃথিবীতে কেউ জন্মীয় চরে। খাবার জন্য, কেউ জন্মায় বাঁধা খাবার জন্য। শ্যামলাল শেষোক্ত শ্রেণীর জীব ছিলেন। পৃথিবীতে যত রকম চাকরি আছে, তার মধ্যে এই মুন্সেফিই ছিল তার পক্ষে সব চাইতে উপযুক্ত কাজ। এ কাজে ঢোকার অর্থ কর্মজীবনে প্ৰবেশ করা নয়, ছাত্রজীবনেরই মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া । অন্তত শ্যামলালের বিশ্বাস তা-ই ছিল, এবং সেই সাহসেঙ্গ তিনি ঐ কাজে ভর্তি হন। এতে চাই শুধু আইন পড়া আর রায় লেখা। পড়ার ত তাঁর আশৈশব অভ্যাস ছিল, আর রায় লেখাকে তিনি এগজামিনে প্রশ্নপত্রের উত্তর লেখা হিসেবে দেখতেন। ইউনিভারসিটির এগজামিনের চাইতে এ এগজামিন দেওয়া তার পক্ষে ঢের সহজ ছিল, কারণ এতে বই দেখে উত্তর লেখা যায় । ( R ) চাকরির প্রথম পাঁচ বৎসর তিনি চৌকিতে চেকিতে ঘুরে বেড়ান । সে সব এমন জায়গা, যেখানে কোন ভদ্রলোকের ”বসতি নেই, কাজেই কোন ভদ্রলোক তাদের নাম জানে না। শ্যামলালের মনে কিন্তু সুখ সন্তোষ দুই-ই ছিল। জীবনে যে দুটি কাজ তিনি করতে পারতেন— જ૭ી মুখস্থ করা এবং পরীক্ষা দেওয়া-এ ক্ষেত্রে সে দুটির চর্চা করবার তিনি সম্পূর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন। এই পাঁচ বৎসরের মধ্যে Tenancy Act, Limitation Act 48 Civil Procedure Code"és তিনি এতটা জ্ঞান সঞ্চয় করেছিলেন যে, সে পরিমাণ মুখস্থ বিদ্যা যদি হাইকোর্টের সকল জজের থাকত, তাহলে কোন রায়ের বিরুদ্ধে আর বিলেত-আপীল হত না ।