পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যখ 8Vá আর তার রক্ষার জন্য বিজ্ঞানের চরম কৌশলে তালাচাবি তৈরী করা হয়েছে ; আর সে ধনাগার রয়েছে পাতালে। এর কারণ বেচারা ফরাসীরা যখ দেওয়া রূপ সহজ উপায়টি জানে না। আমি একবার একটি যখ দেখেছিলুম—কোথায়, কখন, কি অবস্থায়, তার ইতিবৃত্ত একটি গল্প আকারে প্রকাশ করেছি। সে গল্পটি শুনলে গ্ৰীক আলঙ্কারিক আরিস্টটল বলতেন যে, সেটি একটি কাব্য ; কেননা তার অন্তরে আছে সুধু terror and pity। অবশ্য বাঙলাদেশের কাব্যসমালোচকদের মত সম্পূর্ণ আলাদা। এর কারণ বাঙালীরা গ্ৰীক নয়, আর গ্রীক হতেও চায় না; হতে চায় ইংরেজ। সে যাই হােক, আমার আহুতি নামক সে গল্পটি সম্বন্ধে বাঙালী সমালোচকের মত কি, তা শুনে তোমাদের কোনও লাভ নেই।-কেননা সে গল্পটি তোমাদের পড়তে আমি অনুরোধ করব না। সেটি ছোট ছেলের গল্প হলেও ছোট ছেলেদের পাঠ্য নয়। আজ যে যখের গল্পটি তোমাকে বলব, সে গল্প আমি শুনেছি পরের মুখে ; আর এ গল্পটির ভিতর আর যাই থাক, পিলে চমকান ভয় নাই। আমি নিজে পথিমধ্যে যখ দেখে এতটা ভয় পাই যে যখন বাড়ী গিয়ে উঠলুম, তখন আমার দেহের উত্তাপ ১০৪” ডিগ্ৰীতে উঠে গিয়েছে। একৈ জ্যৈষ্ঠ মাস, আকাশে হচ্ছে অগ্নিবৃষ্টি, তার উপর ম্যালেরিয়ার দেশ, তার উপর মনের উপর বিভীষিকার প্রচণ্ড ধাক্কা-এই সব মিলে আমার নাড়ীকে যে ঘোড়দৌড় করাবে, তাতে আশ্চর্য কি ?—বাড়ী গিয়েই বিছানা নিলুম, আর সাতদিন সেখান থেকে নড়িনি। আমার চিকিৎসার ভার নিলেন জনৈক পাড়া গেয়ে কবিরাজ। তার ওষুধ হল দুটি-লঙ্ঘন। আর পাচন। সে পাচন যেমন সবুজ তেমনি তিতো। লঙ্ঘনের চোটে ক্ষিধেয় পেট চো চো করত; তাই সেই পাচন ওষুধ হিসেবে নয়, রোগীর পথ্য হিসেবে গলাধঃকরণ করাতুম। আমার বিছানার পাশে সমস্ত দিন হাজির থাকতেন। রমা ঠাকুর। আর এই শয্যাশায়ী অবস্থায় তঁর মুখে এ গল্প শুনেছি। আগে দু’কথায় রমা ঠাকুরের পরিচয় দিই; কারণ তিনি ছিলেন