বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a शैग९धई তার লেজে পা দিলে তিনি তখনি উল্টে তাকে ছোবল মারতেন, আর সেই সঙ্গে বিষ ঢেলে দিতেন। যে কথা তিনি শানিয়ে বলতেন, সে কথা প্রায়ই বিষাদগ্ধ-বাণের মত লোকের বুকে গিয়ে বিধিত। সোমনাথের মতের সঙ্গে তার চরিত্রের যে বিশেষ কোনও মিল ছিল না, তার প্রমাণ ত তার প্রণয়কাহিনী থেকেই স্পষ্ট পাওয়া যায়। গরল তাঁর কণ্ঠে থাকলেও, তাঁর হৃদয়ে ছিল না। হাড়ের মত কঠিন ঝিনুকের মধ্যে যেমন জেলির মত কোমল দেহ থাকে, সোমনাথেরও তেমনি অতি কঠিন মতামতের ভিতর অতি কোমল মনোভাব লুকিয়ে থাকত। তাই তার মতামত শুনে আমার হৃৎকম্প উপস্থিত হত না, যা হত তা হচ্ছে ঈষৎ চিত্তচাঞ্চল্য, কেননা তঁর কথা যতই অপ্রিয় হোক, তার ভিতর থেকে একটি সত্যের চেহারা উকি মারত,-যে সত্য আমরা দেখতে চাইনে বলে দেখতে পাইনে । এতক্ষণ আমরা গল্প বলতে ও শুনতে এতই নিবিষ্ট ছিলুম যে, বাইরের দিকে চেয়ে দেখবার অবসর আমাদের কারও হয়নি । সকলে যখন চুপ করলেন, সেই ফাঁকে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘ কেটে গেছে, আর চাঁদ দেখা দিয়েছে। তার আলোয় চারিদিক ভরে গেছে, আর সে আলো এতই নির্মল, এতই কোমল যে, আমার মনে হল যেন বিশ্ব তার বুক খুলে আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে তার হৃদয় কত মধুর আর কত করুণ। প্রকৃতির এ রূপ আমরা নিত্য দেখতে পাইনে বলেই আমাদের মনে ভয় ও ভরসা, সংশয় ও বিশ্বাস, দিন রাত্তিরের মত পালায় পালায় নিত্য যায়। আর আসে । অতঃপর আমি আমার কথা সুরু করলুম।