পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



রাজরানী

 রাজা বললেন, পাত্র-মিত্রদের পছন্দ নিয়ে কন্যা দেখার কাজ চলে না।

 তা হলে রাজহস্তী তৈরি করতে বলে দিই?

 রাজা বললেন, আমার এক জোড়া পা আছে।

 সঙ্গে কয়জন যাবে পেয়াদা?

 রাজা বললেন, যাবে আমার ছায়াটা।

 আচ্ছ, তা হলে রাজবেশ পরুন— চুনিপান্নার হার, মানিক—লাগানো মুকুট, হীরে-লাগানো কাকন আর গজমোতির কানবালা।

 রাজা বললেন, আমি রাজার সঙ সেজেই থাকি, এবার সাজব সন্নেসীর সঙ।

 মাথায় লাগালেন জটা, পরলেন কপনি, গায়ে মাখলেন ছাই, কপালে আঁকলেন তিলক, আর হাতে নিলেন কমণ্ডলু আর বেল কাঠের দণ্ড। ‘বোম বোম্ মহাদেব’ ব’লে বেরিয়ে পড়লেন পথে। দেশে দেশে রটে গেল— বাবা পিনাকীশ্বর নেমে এসেছেন হিমালয়ের গুহা থেকে, তাঁর একশো-পঁচিশ বছরের তপস্যা শেষ হল।

 রাজা প্রথমে গেলেন অঙ্গদেশে। রাজকন্যা খবর পেয়ে বললেন, ডাকো আমার কাছে।

 কন্যার গায়ের রঙ উজ্জল শ্যামল, চুলের রঙ যেন ফিঙের পালক, চোখ দুটিতে হরিণের চমকে-ওঠা চাহনি। তিনি বসে বসে সাজ করছেন। কোনো বাঁদী নিয়ে এল স্বর্ণচন্দন বাট, তাতে মুখের রঙ হবে যেন চাঁপাফুলের মতো। কেউ-বা আনল ভৃঙ্গলাঞ্ছন তেল, তাতে চুল হবে যেন পম্পাসরোবরের ঢেউ। কেউ-বা আনল মাকড়সা-জাল শাড়ি। কেউ-বা আনল হাওয়া-হালকা ওড়না। এই করতে করতে দিনের তিনটে প্রহর যায় কেটে। কিছুতেই কিছু মনের মতো হয় না। সন্নেসীকে বললেন, বাবা, আমাকে এমন চোখ-ভোলানো সাজের

৩৭