পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০৪
গল্প-দশক।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ।


নন্দীগ্রাম কখন্ ছাড়াইয়া গেল, তারাপদ তাহার খোঁজ লইল না। অত্যন্ত মৃদুমন্দ গতিতে বৃহৎ নৌকা কখনো পাল তুলিয়া কখনো গুণ টানিয়া নানা নদীর শাখা প্রশাখার ভিতর দিয়া চলিতে লাগিল;—নৌকারোহীদের দিনগুলিও এই সকল নদী উপনদীর মত, শান্তিময় সৌন্দর্য্যময় বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়া সহজ সৌম্য গমনে মৃদুমিষ্ট কলস্বরে প্রবাহিত হইতে লাগিল। কাহারো কোনরূপ তাড়া ছিল না; মধ্যাহ্নে স্নানাহারে অনেকক্ষণ বিলম্ব হইত, এদিকে সন্ধ্যা হইতে না হইতেই একটা বড় দেখিয়া গ্রামের ধারে, ঘাটের কাছে, ঝিল্লিমন্দ্রিত খদ্যোতখচিত বনের পার্শ্বে নৌকা বাঁধিত।

 এমনি করিয়া দিনদশেকে নৌকা কাঁঠালিয়ায় পৌঁছিল। জমিদারের আগমনে বাড়ি হইতে পাল্কী এবং টাটু ঘোড়ার সমাগম হইল, এবং বাঁশের লাঠি হস্তে পাইক বরকন্দাজের দল ঘন ঘন বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজে গ্রামের উৎকণ্ঠিত কাকসমাজকে যৎপরোনাস্তি মুখর করিয়া তুলিল।

 এই সমস্ত সমারোহে কালবিলম্ব হইতেছে ইতিমধ্যে তারাপদ নৌকা হইতে দ্রুত নামিয়া একবার সমস্ত গ্রাম পর্য্যটন করিয়া লইল। কাহাকেও দাদা, কাহাকেও খুড়া, কাহাকেও দিদি, কাহাকেও মাসী বলিয়া দুই তিন ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত গ্রামের সহিত সৌহার্দ্দ্যবন্ধন স্থাপিত করিয়া