পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অতিথি।
২০৭

জানিত তারাপদ বিশেষরূপে তাহাদেরই তারাপদ-অত্যন্ত গোপনে সংরক্ষণীয়—ইতরসাধারণে তাহার একটু আধটু আভাসমাত্র পাইবে অথচ কোনমতে নাগাল পাইবে না, দুর হইতে তাহার রূপে গুণে মুগ্ধ হইবে এবং চারুশশিদের ধন্যবাদ দিতে থাকিবে। এই আশ্চর্য্য দুর্লভ দৈবলব্ধ ব্রাহ্মণ বালকটি সোনামণির কাছে কেন সহজগম্য হইল? আমরা যদি এত যত্ন করিয়া না আনিতাম, এত যত্ন করিয়া না রাখিতাম তাহা হইলে সোনামণিরা তাহার দর্শন পাইত কোথা হইতে? সোনামণির দাদা! শুনিয়া সর্ব্বশরীয় জ্বলিয়া যায়!

 যে তারাপদকে চারু মনে মনে বিদ্বেষশরে জর্জ্জর করিতে চেষ্টা করিয়াছে, তাহারই একাধিকার লইয়া এমন প্রবল উদ্বেগ কেন? বুঝিবে কাহার সাধ্য!

 সেই দিনই অপর একটা তুচ্ছসূত্রে সোনামণির সহিত চারুর মর্মান্তিক আড়ি হইয়া গেল। এবং সে তারাপদর ঘরে গিয়া তাহার সখের বাঁশিটি বাহির করিয়া তাহার উপর লাফাইয়া মাড়াইয়া সেটাকে নির্দ্দয়ভাবে ভাঙ্গিতে লাগিল।

 চারু যখন প্রচণ্ড আবেগে এই বংশীধ্বংসকার্যে নিযুক্ত আছে এমন সময় তারাপদ আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিল। সে বালিকার এই প্রলয় মুর্ত্তি দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া গেল। কহিল “চারু, আমার বাঁশিটা ভাঙ্গ্‌চ কেন?” চারু রক্তনেত্রে রক্তিমমুখে “বেশ কর্‌চি, খুব কর্‌চি” বলিয়া আরও বার দুই চার বিদীর্ণ বাঁশির উপর অনাবশ্যক পদাঘাত করিয়া উচ্ছ্বসিত