পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অতিথি।
২১৭

হাঙ্গামার মত তারাপদর পাঠগৃহে গিয়া পড়িত। কখনো রাগ, কখনো অনুরাগ, কখনো বিরাগের দ্বারা তাহার পাঠচর্য্যার নিভৃতশান্তি অকস্মাৎ তরঙ্গিত করিয়া তুলিত। তাহাতে আজকাল, এই নির্লিপ্ত মুক্তস্বভাব ব্রাহ্মণ বালকের চিত্তে মাঝে মাঝে ক্ষণকালের জন্য বিদ্যুৎস্পন্দনের ন্যায় এক অপূর্ব্ব চাঞ্চল্য সঞ্চার হইত। যে ব্যক্তির লঘুভার চিত্ত চিরকাল অক্ষুন্ন অব্যাহতভাবে কালস্রোতের তরঙ্গচূড়ায় ভাসমান হইয়া সম্মুখে প্রবাহিত হইয়া যাইত, সে আজকাল এক একবার অন্যমনস্ক হইয়া বিচিত্র দিবাস্বপ্নজালের মধ্যে জড়ীভূত হইয়া পড়ে। এক একদিন পড়াশুনা ছাড়িয়া দিয়া সে মতিবাবুর লাইব্রেরীর মধ্যে প্রবেশ করিয়া ছবির বইয়ের পাতা উল্টাইতে থাকিত; সেই ছবিগুলির মিশ্রণে যে কল্পনালোক সৃজিত হইত তাহা পূর্ব্বেকার হইতে অনেক স্বতন্ত্র এবং অধিকতর রঙীন্। চারুর অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করিয়া সে আর পূর্ব্বের মত স্বভাবতঃ পরিহাস করিতে পারিত না, দুষ্টামি করিলে তাহাকে মারিবার কথা মনেও উদয় হইত না। নিজের এই নিগুঢ় পরিবর্ত্তন এই আবদ্ধ আসক্তভাব তাহার নিজের কাছে এক নূতন স্বপ্নের মত মনে হইতে লাগিল।

 শ্রাবণ মাসে বিবাহের শুভদিন স্থির করিয়া মতিবাবু তারাপদর মা ও ভাইদের আনিতে পাঠাইলেন,তারাপদকে তাহা জানিতে দিলেন না। কলিকাতার মোক্তারকে গড়ের বাদ্য বায়না দিতে আদেশ করিলেন এবং জিনিষপত্রের ফর্দ্দ পাঠাইয়া দিলেন।

১৯