পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬
গল্প-দশক।

আমাকে মাপ কর, আমি তোমার সিন্ধুক হইতে টাকা চুরি করিয়াছি।”

 তাঁহারা অবাক হইয়া বিছানায় বসিয়া পড়িলেন। বিন্ধ্য বলিল, তাহার স্বামীকে বিলাতে পাঠাইবার জন্য সে এই কাজ করিয়াছে।

 তাহার বাপ জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমাদের কাছে চাহিস্‌ নাই কেন?”

 বিন্ধ্যবাসিনী কহিল,“পাছে বিলাত যাইতে তোমরা বাধা দেও!”

 রাজকুমার বাবু অত্যন্ত রাগ করিলেন। মা কাঁদিতে লাগিলেন, মেয়ে কাঁদিতে লাগিল এবং কলিকাতার চতুর্দ্দিক হইতে বিচিত্র সুরে আনন্দের বাদ্য বাজিতে লাগিল।

 যে বিন্ধ্য বাপের কাছেও কখনও অর্থ প্রার্থনা করিতে পারে নাই এবং যে স্ত্রী স্বামীর লেশমাত্র অসম্মান পরমাত্মীয়ের নিকট হইতেও গোপন করিবার জন্য প্রাণপণ করিতে পারিত, আজ একেবারে উৎসবের জনতার মধ্যে তাহার পত্নীঅভিমান, তাহার দুহিতৃসম্ভ্রম, তাহার আত্মমর্য্যাদা চূর্ণ হইয়া প্রিয় এবং অপ্রিয়, পরিচিত এবং অপরিচিত সকলের পদতলে ধূলির মত লুণ্ঠিত হইতে লাগিল। পূর্ব্ব হইতে পরামর্শ করিয়া, ষড়যন্ত্রপূর্ব্বক চাবি চুরি করিয়া, স্ত্রীর সাহায্যে রাতারাতি অর্থ অপহরণপূর্ব্বক অনাথবন্ধু বিলাতে পলায়ন করিয়াছে, এ কথা লইয়া আত্মীয়কুটুম্বপরিপূর্ণ বাড়ীতে একটা ঢী ঢী পড়িয়া