পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭০
গল্প-দশক।

শাখার উপরে চঞ্চল অন্যমনস্ক পাখী কিচ্‌মিচ্‌ শব্দে স্বগত উক্তি প্রকাশ করিত, নীলকান্ত বইয়ের পাতায় চক্ষু রাখিয়া কি ভাবিত সেই জানে অথবা সেও জানে না। একটা কথা হইতে কিছুতেই আর একটা কথায় গিয়া পৌঁছিতে পারিত না, অথচ, বই পড়িতেছি মনে করিয়া তাহার ভারি একটা আত্মগৌরব উপস্থিত হইত। সাম্নে দিয়া যখন একটা নৌকা যাইত তখন সে আরও অধিক আড়ম্বরের সহিত বইখানা তুলিয়া লইয়া বিড় বিড় করিয়া পড়ার ভাণ করিত; দর্শক চলিয়া গেলে সে আর পড়ায় উৎসাহ রক্ষা করিতে পারি না।

 পূর্ব্বে সে অত্যন্ত গানগুলো যন্ত্রের মত যথানিয়মে গাহিয়া যাইত, এখন সেই গানের সুরগুলো তাহার মনে এক অপূর্ব্ব চাঞ্চল্য সার করে। গানের কথা অতি যৎসামান্য, তুচ্ছ অনুপ্রাসে পরিপূর্ণ, তাহার অর্থ নীলকান্তের নিকট সম্যক্‌ বোধগম্য নহে, কিন্তু যখন সে গাহিত–

ওরে মাংস, জন্মি দ্বিজবংশে,
এমন নৃশংস কেন হলি রে,–
বল্‌ কি জন্যে, এ অরণ্যে,
রাজকন্যার প্রাণসংশয় করিলি রে,–

 তখন সে যেন সহসা লোকান্তরে জন্মান্তরে উপনীত হইত—তখন চারিদিকের অভ্যস্ত জগৎটা এবং তাহার তুচ্ছ জীবনটা গানে তর্জ্জমা হইয়া একটা নুতন চেহারা ধারণ করিত। রাজহংস এবং রাজকন্যার কথা হইতে তাহার মনে