পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

টমি।

মন্দির মধ্যে একটি শ্বেত প্রস্তরের শিবলিঙ্গ, তাহার সম্মুখে পুজা-নিরতা বিধবাবেশ-ধারিণী রমণী। টমি ঝাঁপাইয়া রমণীর ক্রোড়ে উঠিয়াছে। তাঁহার হস্তের অর্ঘ্য পড়িয়া গিয়াছে, টমির পদাঘাতে পুষ্পপাত্রের পুষ্পরাশি ছড়াইয়া পড়িয়াছে, নৈবেদ্য ভূমিতে গড়াইতেছে। রমণী টমিকে কোলে করিয়া পাষাণ-প্রতিমার ন্যায় স্থির হইয়া বসিয়া আছেন।

 পশ্চাতে পদশব্দ শুনিয়া তিনি ফিরিয়া চাহিলেন। স্তস্তিত হইয়া আমার পানে চাহিয়া রহিলেন। আমার যেন মনে হইল, তাঁহাকে কোথায় দেখিয়াছি, কিন্তু কিছুতেই মনে করিতে পারিতেছি না। দূরে, বহুদূরে তাঁহার মত কাহার অস্পষ্টমূর্ত্তি আমার স্মৃতিপটে ফুটিয়া উঠিতেছে। কে সে রমণী? তাঁহাকে কোথায় দেখিয়াছি? তাঁহাকে দেখিয়া আমার শিরার রক্ত চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে যেন বিজলী থেলিয়া যাইতেছে, কিন্তু কোথায় তাহাকে দেখিয়াছি মনে করিতে পারিতেছি না। এইরূপ মুখশ্রী আর একবার যেন তাহার মত কাহাকেও দেখিয়াছি।

 বাসর সজ্জায় নিশীথ রাত্রিতে উৎসব-কোলাহল-মুখরিত গৃহে চন্দনচর্চ্চিত একখানি মুখের মতন। কিন্তু সে ত নাই, বহুদিন পূর্ব্বে আমাকে ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছে। অথচ তাহারই মতন—সে যেন রোগশয্যায়— তখন তাহার দেহ শীর্ণ হইয়া গিয়াছিল—এ অনশনক্লিষ্ট দেবীমূর্ত্তি বিধবার সজ্জায় তাহারই মত দেখিতে। টমি কি তাঁহাকে ভাবিয়াই এখানে আসিয়াছে। না,—এ নয়ন-যুগলে সেই পুরাতনভাব যেন সত্যই প্রদীপ্ত রহিয়াছে। ইনি যেন আমার চির-পরিচিত—কতদিন যেন ইঁহাকে দেখিয়াছি।

৯৫