পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

ভিতর প্রবেশ করিল, পা টিপিয়া টিপিয়া আমার খাটের নিকট আসিল, বিশেষ মনোযোগের সহিত আমাকে দেখিল, আমি চাহিয়া আছি দেখিয়া অপ্রস্তুত হইয়া উঠিল, তাহার মুখখানি লাল হইয়া উঠিল, সে মাথায় কাপড় টানিয়া দিয়া পলাইয়া গেল। তাহার পরে একজন গৌরবর্ণ প্রৌঢ়বয়স্ক ভদ্রলোক গৃহে প্রবেশ করিলেন, অনুমানে বুঝিলাম তিনিই গৃহস্বামী। তিনি আসিয়া আমার খাটের পাশে এক খান চেয়ার টানিয়া বসিলেন, ধীরে ধীরে আমার অঙ্গ স্পর্শ করিলেন, তাহারপর জিজ্ঞাসা করিলেন “আপনি এখন কেমন আছেন?” আমি মাথা নাড়িয়া জানাইলাম যে ভাল আছি। তখন আমাকে অধিক কথা কহিতে নিষেধ করিয়া তিনি ঘর হইতে চলিয়া গেলেন, আমি বিছানায় পড়িয়া আকাশ-পাতাল চিন্তা করিতে লাগিলাম।

সেই দিন সন্ধ্যার সময় একজন পরিচিত ব্যক্তি আমার ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল; সে আবদুল। আবদুলের নিকট সমস্ত সংবাদ পাইলাম। গৃহস্বামীর নাম শ্রীযুক্ত রসময় নদী, তিনি বর্ম্ম-প্রবাসী, রেঙ্গুনের রেল আফিসের উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারী, বহুদিন পরে অবকাশ লইয়া দেশে আসিয়াছেন। জাহাজ হইতে তাঁহারই পুত্রকন্যা জলে পড়িয়া গিয়াছিল। জাহাজে ধাক্কা লাগিয়া আমি অজ্ঞান হইয়া জলে ডুবিয়া গিয়াছিলাম, আবদুল আমাকে গঙ্গাগর্ভ হইতে উদ্ধার করিয়াছিল। প্রায় একমাস কাল হাঁসপাতালে ছিলাম, তাহারপর রসময় বাবু আমাকে তাঁহার গৃহে আনিয়াছেন, জলের ন্যায় অর্থব্যয় করিয়া আমার চিকিৎসা করাইয়াছেন, এবং আমার জন্য দেশে না গিয়া কলিকাতায় বাস করিতেছেন। আবদুলের কথা শুনিতে শুনিতে আমার চোখে জল আসিল। সেদিন

১৩৬