পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিয়তি।

 চৌধুরীদিগের অন্নে অনেক লোক প্রতিপালিত হইত। প্রাণমোহনের পিতা গ্রামে যে বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন তাহার শিক্ষকবর্গ প্রাণমোহনের গৃহেই আশ্রয় পাইয়াছিলেন। বহুদিন পূর্ব্বে জীবনমোহন এক অনাথ ব্রাহ্মণসন্তানকে আশ্রয় দিয়াছিলেন। কান্তিচন্দ্র গ্রাম্য বিদ্যালয়ে শিক্ষলাভ করিয়া সেইখানেই শিক্ষক হইয়াছিল। জীবনমোহন অনেকবার তাহার বিবাহ দিয়া তাহাকে সংসারী করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু পারেন নাই। কান্তি আত্মীয়-স্বজন ও অর্থের অভাব জানাইয়া অব্যাহতি লাভ করিয়াছিল। প্রাণমোহনের ইচ্ছা ছিল যে মাধুরীর সহিত তাহার বিবাহ দিয়া তাহাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন, কিন্তু জীবনমোহনের মত না হওয়ায় তাহার আশা সফল হয় নাই। মাধুরী বিধবা হইবার পরে প্রাণমোহন সঙ্কল্প করিয়াছিলেন যে কান্তির সহিত মাধুরীর পুনরায় বিবাহ দিবেন। জীবনমোহন দ্বিতীয়বার তীর্থপর্য্যটনে নির্গত হইলে প্রাণমোহন একদিন স্ত্রী ও কন্যার নিকটে নিজের মনের ভাব জ্ঞাপন করিলেন। তাহা শুনিয়া প্রমোদাসুন্দরী পুনরায় ভূমিশয্যা গ্রহণ করিলেন, মাধুরী কাঁদিয়া বুক ভাসাইয়া দিল, কিছুতেই বিবাহ করিতে সন্মত হইল না। সে বলিল পিতামহের নিকট শুনিয়াছে হিন্দুর কন্যার একবারের অধিক বিবাহ হয় না, সে কিরূপে দ্বিতীয়বার বিবাহ করিবে। প্রাণমোহন প্রথমদিন আর কিছু বলিলেন না। কিন্তু বারম্বার বলিয়াও যখন কস্তার মত করাইতে পারিলেন না, তখন ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন যে মাধুরীকে বিবাহ করিতেই হইবে।

 সেইদিন হইতে মাধুরী অন্ধকার দেখিল। কথা গোপন রহিল না, ক্রমে গ্রামের লোকে কাণাঘুষা করিতে লাগিল, দেশে রাষ্ট্র হইয়া গেল

১৯