পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রতীক্ষায়।

বাজিতে লাগিল, মধ্যে মধ্যে তাহার সহিত নুপুরনিক্কণ শোনা যাইতেছিল। স্পষ্ট বুঝিতে পারিতেছিলাম যে, বাদ্যের সহিত তালে তালে কে যেন নৃত্য করিতেছে। তাহার পর এস্‌রাজ ও সারেঙ্গীর ধ্বনি ডুবাইয়া বামাকণ্ঠস্বর উত্থিত হইল। যে গাহিতেছিল তাহার ক্ষমতা সত্য সত্যই অপূর্ব্ব, এমন মধুর কণ্ঠস্বর আর শুনি নাই। গান শেষ হইল, শত শত কণ্ঠ প্রশংসাসূচক শব্দ করিয়া উঠিল। তাহার পর আবার সারেঙ্গী বাজিয়া উঠিল, গায়িকা পুনরায় গাহিতে আরম্ভ করিল। ঘড়িতে একটা বাজিল।

 দুই তিনখানা গান শেষ হইল, গায়িকা যখন চতুর্থ গান আরম্ভ করিয়াছে তখন নিম্নতলের প্রাঙ্গণে পাল্কীর বেহারার গলার আওয়াজ পাইলাম; মনে হইল যেন একখানি পাল্কী দ্রুতবেগে উপরে আসিতেছে। অকস্মাৎ গীতবাদ্য থামিয়া গেল। তাহার পর কে যেন মৃত্যু-যন্ত্রণায় চীৎকার করিয়া উঠিল, শত শত লোকে তাহার সহিত আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিল, তাহার পর সমস্ত নিস্তব্ধ হইয়া গেল। যেন বহুলোক ইতস্ততঃ ছুটির বেড়াইতে লাগিল, তাহাদের সহিত অনেক লোক সোপান বাহিয়া দ্বিতলে আসিল। তাহার পর অনেকক্ষণ কোন শব্দ পাইলাম না। কে যেন কাঁদিতে আরম্ভ করিল, বোধ হইল বামাকণ্ঠ। সমস্ত আশাভরসা, শেষ হইয় গেলে স্ত্রীলোকে যেমন ভাবে কাঁদিয়া থাকে, যেমন ভাবে পুরুষে কাঁদিতে পারে না, বুকের পঞ্জরগুলি ভাঙ্গিয়া হৃৎপিণ্ড ছিনাইয়া লইলে রমণীতে যে ভাবে কাঁদিয়া থাকে, সেই ভাবের শব্দ আসিতেছিল। কি কারণে জানি না আমার মনে হইল গায়িকাই যেন কাঁদিতেছে। তাহার পর অন্য লোকে যেন কাহার দেহ লইয়া বারান্দায় আনিয়া ফেলিল, জল ঢালিয়া ধোয়াইল, তাহার পর “লা

৩৫